প্রকাশিত : ১ জানুয়ারী, ২০২১ ২১:২২

অনিশ্চিত শঙ্কা! বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও দিতে হবে বিল!

সুদর্শন কর্মকার:
অনিশ্চিত শঙ্কা! বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও দিতে হবে বিল!

ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরুতেই প্রতি বছর এ এলাকার চাষিরা মটর খুলে রাখেন। চলতি বছর রোপা-আমন মৌসুমের শুরু থেকেই কয়েক দফায় বন্যার কারণে রোপা-আমন ধান চাষ করতে পারেনি নওগাঁর রাণীনগর সদর এলাকার চাষীরা। মে মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে মটর তবুও গ্রাহককে বিল দিতে হবে ৫ হাজার ৫শত ৯৮টাকা! বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও এত টাকা বিল দেয়ার বেড়াজালে পড়ে চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদ শুরু করতে পারেনি ভক্তভোগি মোজ্জাম্মেল হক তোতা।

উপজেলা সদরের সিম্বা গ্রামের মৃত কয়ছের আলীর ছেলে মোজাম্মেল হক তোতা (৬৭) জানান, আমার ভগ্নিপতি একই গ্রামের হামিরউদ্দিনের নামে সংযোগকৃত মিটারে ২০০৮ সালের মার্চ মাস থেকে মটর চালিত এলটি-বি (সেচ) এর মাধ্যমে তিনি নিজে স্কিম করে আসছি। বন্ধ মটরের আকস্মিক ৫ হাজার ৫শত ৯৮টাকা বিল দেখে রাণীনগর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মৌখিক অভিযোগ করে প্রায় আড়াই মাসে ১৭দিন অফিসে ধরনা দিয়েও সমাধানের কোন সন্ধান পাননি তিনি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে তিন দফা তদন্ত করে তিন রকমর মৌখিক বিবৃত প্রতিবেদনে দিশেহারা গ্রাহক!মটর মালিক মোজাম্মেল হক তোতা তার ভাগিনা একই গ্রামের সাইদুজ্জামান সাগরকে বিষয়টা জানালে তিনি অফিসে বিলের সমাধান নিয়ে প্রায় সব কর্মকর্তার কাছে যান। এ অপরাধে প্রথম তদন্তকারী লাইন ট্রেকনিশিয়ান এসএম সেলিম আহমেদ গ্রাহককে ফোন করে ক্ষেপাক্ষেপি করেন বলে অভিযোগ করেন গ্রাহক!

বিলের কাগজ দেখে জানা যায়, যে মাসে মটর বন্ধ করে খুলে রাখা হয় সে মাসে অর্থাৎ মে মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে ২৫০ ইউনিট মোট বিল আসে ৯৩৮ টাকা, জুন মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার শূন্য ইউনিট মোট বিল আসে ৯৬ টাকা, জুলাই ও আগষ্ট মাসেও জুন মাসের মত বিল আসে, সেপ্টেম্বর মাসে শূন্য ইউনিট থাকলেও বিল আসে ১০৬ টাকা, যা পরিশোধ করা হয়েছে। অক্টোবরে এসে বিদ্যুৎ ব্যবহার ১৪৪০ ইউনিট মোট ৪৮৯৮ টাকা বিল আসলে রাণীনগর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কে জানানো হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তিন দফা তদন্ত শেষে নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার ১০৫ ইউনিট এবং সর্বমোট বিল আসে ৫৫৯৮ টাকা! অথচ মটর এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মটর এখনো খোলা রয়েছে এবং মটরের স্থান নিরাপদ ও রক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। সিম্বা গ্রামের আলাউদ্দিন ফকির, জয়েদ, নান্টু সহ অন্তত দশ জনের সাথে কথা বললে তারা জানান, বন্যার কারণে প্রায় ৭/৮ মাস ধরে তার মটর বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে এই মাঠে ইরি-বোরো চাষাবাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এত টাকা বিলের কারণে এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সমাধানের জন্য গিয়ে হয়রানির কারণে ভক্তভোগি নিরুপায় হয়ে একটি পুসকুনি থেকে ডিজেল চালিত ভটভটি দিয়ে পানি সেচ দিয়ে ইরি-বোরো বীজতলা করে ধানের চারার জন্য বীজ বপন করে যা বর্তমানে রোপণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এসব জটিলতার কারণে তিনি ইরি-বোরো চাষ শুরু করতে না পারায় অজানা শঙ্কায় ভোগছেন।

প্রথম তদন্তকারী লাইন ট্রেকনিশিয়ান এসএম সেলিম আহমেদের বরাত দিয়ে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) গ্রাহকের ভাগিনা সাগরকে বলেন, মটর বন্ধ এবং খোলা রয়েছে, তবে মিটার চলছে ইউনিট ও বিল ঠিক আছে!দ্বিতীয় দফায় তদন্তকারী দুই কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান ও মিটার টেষ্টটিং সুপার ভাইজার সুকুমার বলেন, মিটার ইউনিট সবি তো ঠিক আছে মটরও খোলা রয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি কেন এমন ইউনিট ও বিল আসলো?

তৃতীয়বার তদন্ত শেষে এ দুই কর্মকর্তা ফিরার পথে বলেন, গ্রামে আপনাদের শক্র আছে! যারা পোল মিটার থেকে মটর পর্যন্ত সংযোগের দুই তার কোনো এক সময় একত্রিত করে ছিল। যার কারনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আপনারা আগামীকাল অফিসে আসেন। ডিজিএম স্যারের সাথে স্বাক্ষাৎ করেন।গ্রাহকের ভাগিনা সাগর বলেন, গত রবিবার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে ডিজিএম আমাকে বলেন, মিটার পরিবর্তনের একটি আবেদন করেন আর বিলের কি করা যায় তা আমরা দেখবো! তখন আমি প্রশ্ন করি মিটার পরিবর্তনের আবেদন করা মাত্রই আপনার অফিস আমাকে বিল পরিশোধ করতে বলবে?

বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে কেন আমি এত টাকা বিল দিবো? তখন তিনি আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমি অফিসের প্রধান আমার নির্দেশ অমান্য করে আপনি সমাধান চান!? তখন আমি অফিস থেকে বের হয়ে চলে আসি।নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর রাণীনগর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: আকিয়াব হোসেন বলেন, গ্রাহককে মিটার পরিবর্তনের আবেদন দিতে বলেছি এবং বিলের ব্যাপারটা আমরা যতদুর পারি গড় একটি হিসাব করে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবো কিন্তু গ্রাহক আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করেননি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে