প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারী, ২০২১ ২৩:৩৪

মুজিববর্ষে ঘর পাচ্ছে নওগাঁ সদরের ১১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীণ পরিবার

এবাদুল হক, নওগাঁ প্রতিনিধি
মুজিববর্ষে ঘর পাচ্ছে নওগাঁ সদরের ১১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীণ পরিবার

মুজিববর্ষ উপলক্ষে নওগাঁ সদরের ভূমিহীন ও গৃহহীন ১১০টি পরিবারকে ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উপজেলার হাঁপানিয়া, বক্তারপুর, কীর্ত্তিপুর এবং তিলকপুরে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকারভোগীদের মাঝে এসব ঘর হস্তান্তর করবেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে অসহায় দরিদ্র যাদের জমি ও ঘর নেই তাদের জমিসহ ঘর দেয়ার প্রকল্প নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ সদর উপজেলায় সরকারীভাবে ১১০টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ঘর দেয়া হবে। এর মধ্যে হাঁপানিয়া ইউনিয়নে ৬৯টি, বক্তারপুরে ১২টি, কীর্ত্তিপুরে ২৩টি এবং তিলকপুরে ৬টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে দুটি শয়নক্ষ, একটি রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট-বাথরুম ও সামনে একটি বারান্দাসহ রঙিন টিনের ছাউনি রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এবং পানি সরবরাহের জন্য পাম্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

হাঁপানিয়ার মখরপুর গ্রামের বৃদ্ধ ভ্যান চালক আতোয়ার রহমান জানান, আগে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও বয়স বেশি হওয়ায় এখন নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে আর ভ্যান চালাতে পারেন না। বয়স বৃদ্ধির পর কাজ করতে না পারায় সন্তানরা আলাদা থাকেন। স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার এনে দেয়। অন্যের জমিতে বেড়ার তৈরী একটি ছোট্ট বাড়িতে থেকে জীবন পার করছেন। শেষ বয়সে এসে সরকার তাকে একটি বাড়ি করে দিবে জেনে সে খুশিতে আত্নহারা। নতুন বাড়ি তৈরী হওয়ায় দেখতে এসেছেন হাঁপানিয়ার আবাদপুর গ্রামে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এত বড় একটি উপহার পেয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। কীর্ত্তিপুরের দাসকান্দি গ্রামের বিধবা খুকি বিবি বলেন, স্বামী মারা যাবার পর মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ির এক অংশে বেড়ার ঘরে থেকে ভিক্ষা করে খেতে হয়। এর মধ্যে আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। ডাক্তাররা বলেছেন চিকিৎসা না করলে বেশিদিন বাঁচবো না। জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে পাগল মেয়েকে নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। এই মুহুর্তে এসে সরকার আমাকে ঘর দিচ্ছে। আমার মৃত্যু হলেও আর কোনো আপসোস নেই। মরার আগে নিজের নতুন ঘরে থাকতে পারবো এটাই অনেক। মেয়েটার একটা থাকার জায়গা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামণা করছি। তার এই মহানুভবতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীণ থাকবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন-২ প্রকল্পে গৃহ প্রদানের নীতীমালা করা হয়েছে। যারা একেবারেই গৃহহীন আছেন বিশেষ করে যারা বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা যাদের এখনই ঘর দরকার তাদেরকে আমরা বাছাই করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ১১০টি ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে তাদেরকে জমিসহ ঘরটি দিয়েছেন এমন একটি সার্টিফিকেট পাবেন তারা। জমির দলিল, নামজারির খতিয়ান, ডিসিআরসহ সার্টিফিকেট আগামী ২৩ জানুয়ারী তাদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। আরো ভূমিহীন গৃহহীন যারা আছেন তারা এখনো আবেদন করছেন। পরবর্তীতে যদি প্রকল্প আসে আমরা তাদেরকেও ঘর দেয়ার চেষ্টা করবো। 

 

উপরে