প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারী, ২০২১ ১২:৩০

গোপালগঞ্জে হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

অনলাইন ডেস্ক
গোপালগঞ্জে হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

গোপালগঞ্জে ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। শহরের অদূরে ঘোনাপাড়ায় ২০ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্রটি।দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করে ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন লবণাক্ত (সামান্য) আবাদি জমিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসল আবাদের পাশাপাশি কৃষির বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এ গবেষণা কেন্দ্র। পাশাপাশি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষণার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে এটি।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ, নতুন জাতের ফসলের উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই, ফল, সবজি, ডাল, আলু, তৈলবীজ, গম, ভুট্টা, নারিকেল, তাল ও খেজুরের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং মাঠ দিবস, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে বারি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও প্রযুক্তির বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে পরিবেশ উপযোগী এ গবেষণা কেন্দ্র।

গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক এম এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষক হুমকির মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি বিভাগের পাঁচ জেলার ৩৮টি উপজেলার কৃষি উন্নয়নই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ২০১৮ সালে গোপালগঞ্জে এ পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি হাতে নেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল, বিভিন্ন উন্নতজাতের ফসলের দুই হাজার উপযোগিতা যাচাই ও পরীক্ষাসহ ১১৬ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এসব প্লটে সব ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে।’

‘এ প্রকল্পের আওতায় ১১৪টি মিশ্র ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। যেখানে বিভিন্ন জাতের ১০ হাজার ফলের চারা বিতরণ, সাড়ে ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে শাক, সবজি ও বীজ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডেল্টা প্ল্যানের আধুনিক টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।’

প্রকল্পের আওতায় পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে শিক্ষার্থী, স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের জন্য আধুনিক যুগোপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ গবেষণাগার স্থাপন করা হবে। এছাড়া গবেষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত হবে কোয়ার্টার ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পরিবেশবান্ধব অফিস ও অতিথি ভবন।

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলে ধাপের ওপর সবজি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আগে এ পদ্ধতিতে আমাদের এলাকায় কোনো চাষাবাদ হতো না। জাতির পিতার জন্মস্থানে আধুনিক কৃষি গবেষণাগারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন হচ্ছে, যা অত্যন্ত আশার কথা। এতে নতুন নতুন জাতের ফল ও ফসলের জাতের উদ্ভাবন এবং আবাদের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কৃষিতে সমৃদ্ধি আসবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, গোপালগঞ্জ একটি কোস্টাল/সাব-কোস্টাল এলাকা। এখানকার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে ডুবে যায়। যে কারণে সব ধরনের শস্য উৎপাদন করা যায় না। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ এ এলাকায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন ধরনের শস্য উৎপাদন করা যাবে। এতে এলাকার কৃষকরা আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত হতে পারবেন।

‘গবেষণা কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার সুযোগ লাভ করতে পারবেন। পাশাপাশি নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবনসহ বেকারত্ব নিরসন করা সম্ভব হবে।’কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জে যুগোপযোগী একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। গবেষণায় জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম নতুন নতুন ফসলের উদ্ভাবন ও আবাদ হবে। ফসলের অধিক উৎপাদন বাড়বে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।’

উপরে