প্রকাশিত : ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১১:০৩

বাঁধের চিন্তায় ঘুম হারাম হাওরপারের কৃষকের

অনলাইন ডেস্ক
বাঁধের চিন্তায় ঘুম হারাম হাওরপারের কৃষকের

নির্দিষ্ট সময়ের (আড়াই মাস) দেড় মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেক হাওরে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। এতে সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন হাওরপাড়ের স্থানীয় কৃষকরা।তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তার দাবি অধিকাংশ বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

পাউবোর আওতাধীন সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ৫২টি হাওরের দুই লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর বোরো জমির ফসলরক্ষায় ৬১২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে ১২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ৭৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজ করবে। যার অনুকূলে প্রাথমিকভাবে ৬২ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে।

পাউবোর কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালা অনুযায়ী জমির মালিক ও প্রকৃত কৃষকদের দিয়ে পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করা হয়। ১৫ ডিসেম্বরের পর হাওরে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। বোরো চাষাবাদ শেষ পর্যায়ে হলেও অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়সীমার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়া ও আগাম বন্যায় ফসলহানীর শঙ্কায় রয়েছেন বোরো চাষিরা।

কৃষকদের দাবি, বাঁধ নির্মাণের সময় দ্রুত গড়িয়ে গেলেও বাঁধ নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার ফলে ৭৮৭টি পিআইসির অধিকাংশ বাঁধে এখনও কাজ শুরু হয়নি। যথা সময় ৬১২ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।

কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, অনেক এলাকায় প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে প্রভাবশালীদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অথচ বাঁধের কাজ এখনও শুরু হয়নি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই দ্রুত বাঁধের কাজ শুরু করা হোক।

কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি, এখনও হাওরের ধান রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। যদি ধান তলিয়ে যায় সেই কথা চিন্তা করে রাতে ঘুম আসে না।

কৃষক হামিদ মিয়া বলেন, ২০১৭ সালে এভাবে হাওরের বাঁধের কাজ শুরু হয়েছিল বলে আমাদের সব ধান পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই আপনারা হাওরের বাঁধ দ্রুত নির্মাণ করেন।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় জানান, বাঁধের নামে হরিলুট চলছে। প্রতিটি বাঁধের দুর্নীতিতে প্রভাবশালী লোকের হস্তক্ষেপ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। পানি ও আগাম বন্যার আগে বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে বিশ্বাস হয় না।

তিনি বলেন, গণশুনানীর মাধ্যমে প্রকৃত জমির মালিক ও কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়নি। বাঁধের কাজে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে করে হাওরের পানি সময়মতো নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান জানান, ৫০০টির অধিক পিআইসির কাজ চলমান রয়েছে। বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়ায় পিআইসি গঠন ও বাঁধের কাজে কিছু বিলম্ব হয়েছে। তবে আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। পিআইসি গঠনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপরে