বগুড়ায় মাছ মেলায় বাঘাইড় লাখ টাকায় আর মিষ্টি মাছ বিক্রি হলো ৯০০ টাকায়
![বগুড়ায় মাছ মেলায় বাঘাইড় লাখ টাকায়
আর মিষ্টি মাছ বিক্রি হলো ৯০০ টাকায়](./assets/news_images/2021/02/10/13.jpg)
বগুড়ায় এবার মাছ মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ ছিল ৭৬ কেজি ওজনের বাঘাইড়। যা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। এরপরে ছিল আরো একটি ৬০ কেজি ওজনের বাঘাইড়। দূর থেকে দেখে মনে হবে আসলে মাছের রাজ্য। প্রায় ৩০০টি মাছের দোকানে কোটি কোটি টাকার মাছ। এর সঙ্গে দেড় শতাধিক বড় মিষ্টির দোকান, শিশুদের খেলনা, ফল, ফার্ণিচারসহ মেলার বিভিন্ন পসরা মিলিয়ে আরো ৫শতাধিক দোকান বসেছিল। প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে বগুড়ার বৃহত্তম এই মেলায় ৫টি উপজেলার মানুষ উৎসবে মেতে যায়। আয়োজকরা বলছেন একদিনের এ মেলায় প্রায় ৭ কোটি টাকার কেনা বেচা হয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার পোড়াদহ মেলা কমিটির সাথে কথা বলে জানা যায়, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলা বসে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বুধবার মেলাটি হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে পোড়াদহ মেলা নামেই পরিচিত। কথিত আছে প্রায় চারশো বছর আগে থেকে এই মেলা হয়ে আসছে। মেলাস্থলে ইছামতি নদীর তীরে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। এক পর্যায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয়। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরাস্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। বগুড়া সদর, গাবতলী, ধুনট, সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলাসহ ৫ উপজেলার মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। উপজেলা সহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষের পদচারনায় মুখরিত এ মেলা। মেলার আশপাশে অবস্থিত গ্রামগুলোতে প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন এই মেলা দেখতে। বগুড়ার গাবতলীর গোলাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে গোটা এলাকা। এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে যেন উৎসব বয়ে যায়। মেয়ে জামাইয়ের সাথে আত্মীয় স্বজন এসে ভিড় করে। বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে পোড়াদহ মেলা শেষ হলো। দিনব্যাপী এ মেলায় ৫টি উপজেলার অধিকাংশ মানুষের একটি উৎসবের দিন হিসেবে কেটে যায়। পোড়াদহ মেলা শেষ হলে পরের দিন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সাকাত হোসেনের ৭৬ কেজির বাঘাইড় মাছটি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। পরে দামাদামি করে তিনি ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করেছেন। মেলায় আরো একটি ৬০ কেজি ওজনের যমুনা নদীর বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয় কেটে ১২০০ টাকা কেজি। মাছ ব্যবসায়ি শুকুর আলী মাছটির দাম হাঁকিয়েছিলেন ৯০ হাজার টাকা। হরেক রকমের মাছের মধ্যে মেলায় এবার স্থান পেয়েছে তিন কেজি ওজনের মিষ্টি মাছ। মিষ্টি বিক্রেতারা জানান, তিনি মাছ আকৃতির ৩ কেজি ওজনের একটি করে মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরী করেছেন। এছাড়া তিনি আধা কেজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ আকৃতির মিষ্টি বিক্রি করছেন। মিষ্টি তিনি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি। আর একটি মিষ্টি মাছ তিনি বিক্রি করেছেন ৯০০ টাকায়।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য গাবতলীর মহিষাবান ইউপি সদস্য সুলতান মাহমুদ জানান, ২০ একর জায়গার উপর ৩শতাধিক মাছের দোকান, দেড় শতাধিক মিষ্টির দোকানসহ ছোট বড় মিলে ১ হাজার দোকান এখানে বসেছে। মেলায় পুরুষদের প্রচন্ড ভিড় থাকে বলে এলাকার গৃহবধুরা মেলা ঠিকভাবে দেখতে পারেন না। একারণে পোড়াদহ মেলার পরের দিন বৃহস্পতিবার এলাকার গৃহবধু ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের জন্য আয়োজন করা হয় বউমেলার। এই মেলায় নারীরাই কেনাকাটা করবেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন