প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ২১:২৩

ধুনটে ক্লিনিকে নবজাতক ও স্ত্রীকে রেখে স্বামীর পলায়ন ! খরচ বহন করলো পুলিশ

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
ধুনটে ক্লিনিকে নবজাতক ও স্ত্রীকে রেখে স্বামীর
পলায়ন ! খরচ বহন করলো পুলিশ

বগুড়ার ধুনট সদরের শাহজালাল (রাঃ) ক্লিনিকে হাসিনা আকতার (৩০) নামে এক গৃহবধু ও নবজাতক শিশুকে বিছানায় রেখে পালিয়ে গেছেন জহুরুল ইসলাম নামে এক পাষন্ড স্বামী। এদিকে স্বামী পালিয়ে যাওয়ায় ক্লিনিকের খরচ বহন নিয়ে অসহায় ও নিরুপায় হয়ে পড়ে গৃহবধু হাসিনা আকতার। এমতাবস্থায় কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেয় হাসিনা। 

পরে সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ক্লিনিকে ছুটে যান ধুনট থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি সেখানে পৌঁছে ওই গৃহবধুর স্বামী ও আত্বীয় স্বজনদের অবগত করলেও কেউই হাসিনাকে নিতে আসেননি ক্লিনিকে। অবশেষে ধুনট থানার এসআই রুহুল আমিন তার ব্যক্তিগত তবহিল থেকে ৬ হাজার টাকা ক্লিনিকে পরিশোধ করে নবজাত শিশু ও হাসিনাকে ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেন।

জানাগেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা গ্রামের আহমেদ আলীর ছেলে জহরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে গত ৫ বছর আগে পরিচয় হয় শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন কান্দাপাড়া উত্তর নওসানসন গ্রামের মৃত রইচ উদ্দিনের মেয়ে হাসিনা আকতারের। এরপর তারা দুইজন বিয়েও করেন। বিয়ের পর গত দুই বছর আগে হাসিনাকে নিয়ে কাজিপুরে গ্রামের বাড়িতে আসেন স্বামী জহুরুল।

এদিকে তার স্ত্রী গর্ভবর্তী হলে গত ৬ ফেব্রুয়ারী তাকে সিজার করাতে ধুনট শাহজালাল ক্লিনিকে ভর্তি করায় জহুরুল। পরদিন একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় হাসিনা। সন্তান জন্ম হওয়ার পর জহুরুল দুই দিন ক্লিনিকে অবস্থান করলেও গত ৯ ফেব্রুয়ারী সে হাসিনার কাছ থেকে প্রায় ১০ হাজার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। 

এরপর গত তিনদিন ক্লিনিকে নবজাতক শিশুকে নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে থাকে হাসিনা। কিন্তু এরপরও স্বামীর কোন সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিরুপায় হয়ে সরকারি জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেয় হাসিনা। পরবর্তীতে ৯৯৯ নম্বর থেকে ধুনট থানা পুলিশকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে ধুনট থানার এসআই রুহুল আমিন খান সেখানে পৌঁছালেও হাসিনার কোন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েন তিনি। 
এরপর কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৬ হাজার টাকা ক্লিনিকে পরিশোধ করে কাজিপুরের চালিতাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধির কাছে হাসিনা ও নবজাতক শিশুকে হস্তান্তর করেন।

এবিষয়ে গৃহবধু হাসিনা বেগম বলেন, আমার এই এলাকায় আপন বলতে কেউ নেই। আমার স্বামী ভবঘুরে। সে আমার সাথে প্রতারণা করে টাকা-পয়সা নিয়ে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে গেছে। তাই নিরুপায় হয়ে অন্য একজনের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছি।

এবিষয়ে ধুনট থানার এসআই রুহুল আমিন বলেন, পুলিশ সার্বক্ষনিক জনগনের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় একজন অসহায় নারীর পাশে থেকে সামান্য সহযোগিতা করেছি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে