প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ২২:১৬

ধুনটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ সহ আহত ১৫

ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
ধুনটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের
 সংঘর্ষে পুলিশ সহ আহত ১৫

বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ সহ ১৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টার দিকে ধুনট উপজেলা পরিষদ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ধুনট থানা পুলিশের ৪ সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সভাপতি সহ উভয় পক্ষের ১১ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

জানাগেছে, ধুনট উপজেলা পরিষদের এডিপির কাজে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, জাইকা প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকা, রাজস্বখাতে ৫০ লাখ টাকা সহ টিআর, কাবিখা ও কাবিটা, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা সহ বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এসব প্রতিটি প্রকল্পেরই সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাতক আব্দুল হাই খোকন। কিন্তু সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও আব্দুল হাই খোকন দীর্ঘদিনেও এসব প্রকল্পে স্বাক্ষর না করায় সরকারী কোটি টাকার প্রকল্প ফেরত যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। 
এসব বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ধুনট উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় উপস্থিত হলেও আব্দুল হাই খোকন উপস্থিত না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আগামী জুন মাসের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে সরকারী কোটি টাকা ফেরত যাবে। 
একারনে ১০ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্ষুদ্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি পত্রে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাইকে আনাস্থা জ্ঞাপন করেন। এসংবাদ পেয়ে আব্দুল হাই খোকন ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে শনিবার ধুনট উপজেলা পরিষদে এক সমঝোতার উদ্যোগ নেন। 
শনিবার সকাল ১০ টায় ধুনট উপজেলা পরিষদে সমঝোতার বৈঠকে ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত, এমপির প্রতিনিধি হিসেবে তার ছেলে আসিফ ইকবাল সনি, গোপালনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, এলাঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান এমএ তারেক হেলাল, মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ সেলিম সহ ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপস্থিত হন। কিন্তু সমঝোতার বৈঠক থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তিনি উপস্থিত না থাকায় সমঝোতা সম্ভব হয় না।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে অনাস্থা জ্ঞাপনের সংবাদ পেয়ে তার পক্ষের লোকজন ধুনট ডাইম কমপ্লেক্সে জড়ো হতে থাকে। অপরদিকে এমপি পুত্র আসিফ ইকবাল সনিসহ তার পক্ষের দলীয় নেতাকর্মীরাও উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থায় নেয়। 
এর কিছুক্ষন পরেই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপি সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়েছে পথচারী সহ এলাকাবাসী। পরে সংবাদ পেয়ে ধুনট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে ৬ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়। 
সংঘর্ষে ধুনট থানা পুলিশের এসআই প্রদীপ কুমার, এসআই মজিবর রহমান, কনস্টেবল মোজাফফ্র, সবুজ এবং ধুনট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ভিপি শেখ মতিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা রিপন, ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, ধুনট পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুজন সাহা সহ উভয়পক্ষের ১১ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ সেলিম বলেন, ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন প্রতিটি প্রকল্পেই অর্ধেক ভাগ চান। তার চাহিদা পুরন না হওয়ায় দীর্ঘদিনেও তিনি কোন প্রকল্পই অনুমোদন করেননি। এছাড়া তার সমন্নয়হীনতার কারনের গত অর্থ বছরে মসজিদ সংস্কার প্রকল্পের ৬০ লাখ টাকাও ফেরত গেছে। এবারও সরকারি প্রকল্পগুলো ফেরত যেতে বসেছে। এসব কারনে ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। অনাস্থাজ্ঞাপনের চিঠি রবিবার বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করার কথা ছিল। এ সংবাদ শুনে আব্দুল হাই খোকন ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে শনিবার সমঝোতার বৈঠকের ঘোষনা দেন। কিন্তু তিনি উপস্থিত না হয়ে ক্যাডার বাহীনী দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেন। তখন আমাদের বাঁচাতে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত হলে তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালায়। 
তবে এবিষয়ে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা করলেও তিনি রিসিফ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এবিষয়ে খোকনের পক্ষের উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা রিপন বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে যেতেই পূর্ব বিরোধের জের ধরে সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম রনি ও তার লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর করে। এসংবাদ পেয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান সহ নেতাকর্মীরা আমাকে নিতে আসলে তাদের উপরও হামলা চালায় তারা।
এবিষয়ে এমপি পুত্র ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি বলেন, উপজেলা পরিষদে মিটিং এর সংবাদ পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহীনি ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার পরিকল্পনা করে। কিন্তু চেয়ারম্যানরা ভিতরে থাকায় তাদের উপর হামলা করতে না পারলেও তারা আমাদের কয়েক নেতাকর্মীকে আহত করেছে।       
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে সরকারী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না হলে ফেরত যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবগত করলেও তিনি প্রকল্পগুলো অনুমোদন করেনি। সর্বশেষ শনিবার আবারও সমঝোতার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি। বৈঠক চলাকালে উপজেলা পরিষদের বাহিরে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়।
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সংঘর্ষে পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিতে ৬ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। ধুনট বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে