প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ২১:৫৪

শেরপুরে মা ভবানী মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমায় পূণ্যস্নান উৎসব

অর্ধ লক্ষাধিক পূণ্যর্থীদের সমাগম
শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি
শেরপুরে মা ভবানী মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমায় পূণ্যস্নান উৎসব

করোনা মহামারি থেকে মুক্তি পেতে পবিত্র এ তীর্থস্থান বগুড়ার শেরপুরে মা ভবানী মন্দিরে মিলন মেলায় অংশ নিয়েছে হাজার হাজার ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা। রীতিমতে সনাতন ধর্মাম্বলীদের জীবনের পাপ, তাপ, দুঃখ বেদনা মোচনসহ মনবাঞ্চনা পূরণের আশায় ও পূণ্যতা লাভের আশায় মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে পূণ্যস্নান উৎসবে মেতে উঠেছে পূণ্যার্থীরা। 
২৭ ফেব্রুয়ারী শনিবার দিনব্যাপী বাংলা পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর মাঘ মাসে পূর্ণিমার চাঁদের মাঘী পূর্ণিমায় এ পূণ্যস্থানে স্নান মেলা বসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের অন্যতম তীর্থস্থান বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নে ঐতিহাসিক মা ভবানীর মন্দির এলাকায়। 

তবে এ বছর করোনা মহামারী থাকায় মন্দির স্থলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পূণ্যার্থীদের আগমন না ঘটলেও দেশের বিভিন্ন জেলার পূণ্যার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এ উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে  কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 

ঐতিহাসিক মা ভবানী মন্দিরের এই চিরাচরিত তিথিতে পূণ্য স্নানসহ রতি প্রতিমা দর্শন, পূজাঅর্চনা, ভোগদান, অর্ঘদান, মাতৃদর্শন ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ নির্বিঘ্নে সফল ও সুষ্ঠভাবে উদযাপন করার জন্য কমিটি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর মাঘ মাসে পূর্ণিমার চাঁদের মাঘী পূর্ণিমায় এ পূণ্যস্থানে স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ধর্মীয় শাস্ত্রমতে, মাঘী পূর্ণিমার দিনে এ স্থানে অংশ নিলে তার অতীত জীবনের পাপ, তাপ, দুঃখ বেদনা  মোচনসহ পূণ্যতা লাভ হয়। আর সেই আশায় হাজার হাজার ভক্ত নর-নারী ও শিশু কিশোর মন্দিরের শাঁখারী পুকুরে স্নান করেন। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক এই মন্দিরে রতি প্রতিমা দর্শন, পূজাঅর্চনা, ভোগদান, অর্ঘদান, মাতৃদর্শন করেন ভক্তরা। মন্দিরের পক্ষ থেকে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। 
২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোর থেকেই তিথি অনুযায়ী মা ভবানীর মন্দিরে মাঘী পূর্ণিমার উৎসবে যোগ দিতে পূণ্যার্থীরা আসতে থাকেন। এজন্য অসংখ্য দর্শনার্থী রাত যাপন করেন মন্দির এলাকা ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে । 
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা থেকে আসা উর্বসী, লক্ষী, স্নেহা রানী সাহা, আরতি, নাটোরের পুঠিয়া থেকে প্রমিলা রানী, সিরাজগঞ্জের সুস্মিতা রানী বলেন, মায়ের দর্শন নিতে এখানে এসেছি। মনের আশা বাসনা পূরণের জন্য স্নান শেষে মায়ের কাছে আর্শিবাদ করেছি। 
ধুনটের মথুরাপুর গ্রামের পূণ্যার্থী অনিমা রানী বলেন, এখানে এলে দেহ-মন পবিত্র হয়, তাই মায়ের মন্দিরে এসেছি। মন বাসনা পূরণ হবে-এমন আশা নিয়ে মায়ের মন্দিরে এসেছি বলে জানান।
এ উৎসব প্রসঙ্গে মা ভবানীপুর মন্দির সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক দিলীপ কুমার দেব বলেন, প্রতি বছর ভারত সহ বেশ কিছু দেশের ও দূরবর্তী জেলাগুলো থেকে পূণ্যার্থীরা আসে। কিন্তু এবার করোনা মহামারী কারণে পাশর্^বতী দেশগুলো থেকে ভক্তদের আগমন ঘটেনি। 
এদিকে, দিনটিকে ঘিরে সকাল থেকেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ পূণ্যতা লাভের আশায় মন্দিরস্থলে সমবেত হন এবং শাঁখারী পুকুরে পূণ্যস্নান করেন। 
এ উপলক্ষে প্রতিবছর মা ভবানী মন্দিরের চারপাশে মেলা বসে। মেলায় মুড়ি, মুড়কী, ঝুঁড়ি, মিষ্টান্ন, রকমারি খাবার সামগ্রীসহ মসলাদিও পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, ইতিহাস ঐতিহ্যখ্যাত বই পুস্তুক  এ মেলায় পাওয়া যায়। 
এছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান উদযাপন করার সুবিধার্থে  জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলগঠন করা হয় বলে জানিয়েছে উৎসব কমিটি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার  / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে