প্রকাশিত : ৪ মার্চ, ২০২১ ২০:৪০

তিন কোটি টাকার জমি দালাল সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
তিন কোটি টাকার জমি দালাল সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ!

বগুড়ার শেরপুর শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ১.৬৫ একর জমি বিক্রয়ে অধ‍্যক্ষর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছরের শুরুতে  মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ শতাংশ প্রতি একলাখ ১০ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করে জৈনক আজগর হাজী'র মাধ্যমে ১.৬৫ একর সম্পত্তি প্লট আকারে বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এক মাসের ব‍্যবধানে একই জমির দুইটি প্লট ওই মাদ্রাসার শিক্ষকদ্বয় আজগর হাজীর মাধ্যমে তাদের নামে একলাখ ৫০ হাজার টাকা শতাংশ মূল্যে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেন মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোঃ আসাদউল্লাহ ও প্রধান মুহাদ্দিস মোঃ আমানউল্লাহ হাসান।

স্থানীয় দলিল লেখক সমিতি সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার খন্দকার টোলা মৌজায় ধানী জমির সরকারী মূল্য শতাংশ প্রতি একলাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আছে। এদিকে দায়িত্ব নেয়ার পরদিন থেকেই আজগর হাজী আলিয়া মাদ্রাসার ওই সম্পত্তি শতক প্রতি দেরলাখ উর্ধ্বদামে বিক্রিয় করেছেন বলে জানাগেছে। পাশের একটি প্লটের মালিক ছিলেন এস এম নাসির উদ্দিন ,তিনি গত জানুয়ারি মাসে তার মালিকানাধীন চার শতকের প্লটটি বিক্রিয় করেছেন আট লাখ টাকায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নাসির উদ্দিনের বিক্রিত প্লটটিতে মাটি ভরাটের কাজ করছেন নব‍্য মালিক আলী আকবর। কথাহয় স্থানীয় বাসিন্দা তাহেরুল সরকার, শাহজাহান সরকার, চানমিয়া হাজী'র সাথে। তারা জানান আশপাশের দুই ফিট নিচু জমির বর্তমান মূল‍্য কমপক্ষে একলাখ ৯০ হাজার টাকা শতাংশ।

মাদ্রাসার জমি থেকে প্লট কিনেছেন মোঃ ছলেমান, ইব্রাহিম, লিটন, মুকুল। কথাহয় মোঃ ছলেমানের সাথে তিনি জানান মাদ্রাসা থেকে আমি ৩৬ শতাংশ জমি কিনতে চেয়েছি কিন্তু আজগর হাজীর অনুরোধে মসজিদের জন‍্য দুই শতাংশ জমি ছেরে দিয়ে ৩৪ শতাংশ জমি কিনেছি। এক লাখ ১০ হাজার টাকা শতাংশ হিসেবে ৩৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেছি। বাকি ৪০ হাজার টাকা শতাংশ হিসেবে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাক আজগর হাজিকে দেয়ার তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন মোঃ ছলেমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মাটি ভরাট করার কথা ছিল পাঁচ ফিট কিন্তু তারা করেছে দুই ফিট মাত্র, তিনি আরো বলেন, মসজিদ করার কথা ছিল এখন শুনছি মসজিদের জমি অধ‍্যক্ষ নিজের দখলে নিয়েছেন। ছলেমান জানান জমি নিবন্ধনের সময় দাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অধ‍্যক্ষ হাফিজুর রহমান সাক্ষর করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব‍‍্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের মতে ১৬৫ শতাংশ জমি দুই ফিট মাটি ভরাট করতে ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। ১৫ লাখ টাকা লগ্নি করে ১৬৫ শতাংশ জমি কমপক্ষে  এক লাখ ৮০ হাজার টাকা শতাংশ হিসেবে প্রায় তিন কোটি টাকা বিক্রি করা যেতো।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিয় করতে হলে ঢোলশহরৎ ও বিজ্ঞাপনের ব‍্যবস্থা করে বহুল প্রচারণা পরবর্তী নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের নিতিমালা থাকলেও এই সম্পত্তি বিক্রিতে তার কোনটাই দৃশ্যমান হয়নী। ১.৬৫ একর জমি একলাখ দশ হাজার টাকা শতাংশ হিসাবে এক কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা যদি মাদ্রাসা পেয়ে থাকে তবে আজগর সিন্ডিকেটের পকেটে ঢুকুছে প্রায় কোটি টাকা। ১.৬৫ একর জমি মোট ৩৬ টি প্লট আকারে বিক্রিয় করে (এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) এক কোটি ১২ লাখ টাকা আল-আরাফা ব‍্যাংক শেরপুর শাখায় শেরপুর শহিদীয়া আলিয়া মাদ্রাসার ব‍্যাংক হিসাব নাম্বরে জমা হয়েছে বলে দাবী করেন আজগর হাজী। তিনি জানান শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসার উপাধ‍্যক্ষ মোঃ আসাদউল্লাহ ১০ শাতাংশের একটি প্লট কিনেছেন,একই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুহাদ্দিস মোঃ আমানউল্লাহ হাসান ১৪ শতকের অপর একটি প্লট ও অধ‍্যক্ষ হাফিজুর রহমান সম্ভবত তার স্ত্রী অথবা মেয়ের জামাই এর নামে পাঁচ শতকের একটি প্লট নিয়েছেন। আজগর বলেন মাদ্রাসার শিক্ষকদের নেয়া মোট ২৯ শতাংশ জমির মূল্য পরিশোধ করেছেন কিনা তার (আজগরের) জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আজগর বলেন, ১৬৫ শতাংশ জমির দক্ষিণ-পূর্ব কোনে পাঁচ শতাংশের একটি প্লট মসজিদ নির্মানে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মৌখিক প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন অধ‍্যক্ষ হাফিজ। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মসজিদের জন্য নির্ধারিত জমি অধ‍্যক্ষ তার নিকটতম স্বজনের নামে নিতে পারেন বলে ধারণা করছেন আজগর হাজী। জমি বিক্রির দায়িত্ব কিভাবে পেলেন জানতে চাইতে আজগর হাজী বলেন দীর্ঘদিন যাবৎ লেগে ছিলাম বলেই দায়িত্ব পেয়ছি।

সুত্র বলছে, গতবছর রমজান মাসে খন্দকার টোলা সরকার পাড়ায় স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে ওই জমির দক্ষিণ-পূর্ব কোনে শাহ্ তুর্কান (রহঃ) নামে জামে মসজিদ নির্মান কল্পে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। মসজিদ প্রসঙ্গে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে শাহ বন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস‍্য মাহমুদুল হাসান লিটন বলেন আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান নিজের মুখেই বলেছেন যেহেতু আগজর হাজী এখান থেকে মোটা অংকে লাভবান হয়েছে পাশাপাশি প্লট ক্রেতাগন সুলভে পল্ট কিনেছেন সেহেতু মসজিদ নির্মানের সিংহভাগ তহবিল আমি তাদের কাছ থেকেই ব‍্যবস্থা করে দিবো। লিটন বলেন, এখন দেখছি মসজিদের নির্ধারিত স্থানে অধ‍্যক্ষের স্ত্রীর নামে মালিকানার সাইনবোর্ড ঝুলতে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমরাও মসজিদ নির্মানে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি তবে অধ‍্যক্ষের এমন প্রতারণায় এলাকবাসী ক্ষুব্ধ।

মসজিদ নির্মান ও জমি বিক্রয় প্রসঙ্গে অধ‍্যক্ষ হাফিজুর রহমানের বক্তব্যে ধারণ করতে গেলে অন রেকর্ড বক্তব্য দিতে বাধসাধেন উপাধ‍্যক্ষ মোঃ আসাদউল্লাহ। উগ্রপন্থায় গনমাধ‍্যম কর্মীদের সাথে অসাচরন করেন আসাদউল্লাহ। সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবে অধ‍্যক্ষ হাফিজ বলেন জমি বিক্রির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব‍্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে এক সময় সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সম্ভব না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। জানতে চাইলে মসজিদের জন‍্য নির্ধারিত জমি এখনো বিক্রিয় হয়নী বলে দাবী করেন অধ‍্যক্ষ হাফিজুর রহমান। প্রতিষ্ঠানের ব‍্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)মাসুম আলী বেগ বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেছি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার  / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে