প্রকাশিত : ১৩ মার্চ, ২০২১ ০৯:৫৭

শুরু হচ্ছে মোংলা চ্যানেলের ১৯ কিলোমিটার ইনারবার ড্রেজিং

অনলাইন ডেস্ক
শুরু হচ্ছে মোংলা চ্যানেলের ১৯ কিলোমিটার ইনারবার ড্রেজিং

মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ১৯ কিলোমিটার ইনারবার ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন হচ্ছে আজ শনিবার। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়োজনে জয়মনিরগোল ফুড সাইলোর পাশে ড্রেজিং সাইটে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী ইনারবার ড্রেজিংয়ের প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী জানান, বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারে ৯.৫০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ আনার জন্য জয়মনিরগোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটারব্যাপী ইনারবারে ২১৬.০৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত।

ড্রেজিং কাজের ঠিকাদার হিসেবে চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য প্রায় ১৫শ একর জমির প্রয়োজন হবে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতা সম্পন্ন প্রায় ৫শ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে মাটি ফেলা হবে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ১ হাজার একর জমিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে মাটি ফেলা হবে।

ব্যক্তি মালিকানাধীন ১ হাজার একর জমির মধ্যে ইতোমধ্যে মোংলা উপজেলায় ৭শ একর জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। তবে দাকোপ উপজেলার বাণিশান্তা, খাজুরা, আমতলা এবং ভোজনখালি গ্রামের ৩শ একর কৃষি জমির বিষয়ে জমির মালিকদের আপত্তি রয়েছে বলে জানা যায়।

দাকোপ উপজেলায় জমি না পাওয়া গেলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জমিতে উঁচু করে মাটি ফেলা হতে পারে। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তয়নের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮.৭২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০৫০ সালে ৪৫.৩২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার ও ৩০ হাজারের বেশি গাড়ী হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর বার্ষিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা কাঁচামাল হিসেবে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঁচামাল মোংলা বন্দরের মাধ্যম আমদানি করতে হবে। ফলে ২০২১ সালের পর মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করার জন্য মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ লক্ষ্যে বন্দরে অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পশুর চ্যানেলের ইনারবারে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে সিইজিআইএসকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ইনারবার ড্রেজিং বিষয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সদস্য এইচএম দুলাল বলেন, বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগমন করে এসব জাহাজ পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। মোংলা বন্দরের আউটারবার এবং ইনাবারে নাব্য সংকটের কারণে কন্টেইনারবাহী ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। মূলত এ কারণেই কন্টেইনারাইজড মালামাল আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহী হন না। ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ সংকট কেটে যাবে বলে আশা করি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে