হাবীবুর-মনির হত্যা : রায়ে অসন্তুষ্ট দল-পরিবার, শরীয়তপুরে আজ হরতাল
শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে সন্তুষ্ট নয় নিহতদের পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
রায়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ কর্মসূচিতে নিহতদের পরিবার ও স্বজনেরাও অংশ নেন। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা সোমবার জেলায় অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন।
রোববার (২১ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে শরীয়তপুর আদালত সংলগ্ন সদর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে এ বিক্ষোভ করা হয়। এতে প্রায় দেড় ঘন্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, নিহতদের পরিবার-পরিজন, সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গীর মোড়ে এসে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিক্ষোভকারীরা সোমবার (২২ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল ঘেষণা করেন। জেলার বাসিন্দাদের হরতালে সমর্থন জানিয়ে দোকানপাট এবং যান চলাচল বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, আসামিরা খুনি। ওরা বিএনপির সন্ত্রাস বাহিনী আওরঙ্গর লোক। ওই খুনিরা হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর সেই হত্যার রায় ঘোষণা করা হয়েছে আজ। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়।
নিহত সাবেক পিপি হাবীবুর রহমানের ছেলে জেলা জজ আদালতের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, বাবা ও চাচা হত্যার বিচারের রায়ে আমি খুশি নই। যাদের বিরুদ্ধে বাবা ও চাচা হত্যার প্রমাণ রয়েছে তাদের অনেকেই খালাস পেয়েছেন। এটা দুঃখজনক।
এর আগে দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসাইন চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শহীদ তালুকদার, সফিক কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শাহীন কোতোয়াল, সলেমান সরদার ও মজিবুর তালুকদার।
অপরদিকে যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন- সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার ও টোকাই রশিদ। একইসঙ্গে তাদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাস জেল দেয়া হয়। এছাড়া মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার, জাকির হোসেন মজনুর দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর্জা মো. হজরত আলী বলেন, মামলাটি গত ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় বাদীপক্ষের ২৮ জন ও আসামিপক্ষের ২৫ জন সাক্ষ্য দেন। মামলায় ১৩ আসামিকে সাজা এবং ৩৯ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। ওই বছরের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ।
ওই নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের সমর্থক। তার ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন নিহত হন।
তৎকালীন সময়ে হাবীবুর রহমান আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
দৈনিক চাঁদনী বাজার সাজ্জাদ হোসাইন