প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০২১ ১৬:৩৩

‘মামলাবাজ’ নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক
‘মামলাবাজ’ নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সুপারিশ

৩৫ বছর বয়সী রীতা রাণী দেবী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার গোকর্ণ গ্রামের গৃহবধূ তিনি। গৃহবধূ পরিচয় ছাপিয়ে এলাকাবাসী এখন তাকে চিনেন একজন মামলাবাজ নারী হিসেবে। পান থেকে চুন খসলেই কারো বিরুদ্ধে মামলা করে বসেন এ নারী।

রীতা রাণী মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে গোকর্ণ গ্রামের একজন গৃহবধূসহ সাত যুবককে একাধিক মামলায় ফাঁসিয়ে সর্বস্বান্ত করেছেন। এছাড়া মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রীতা রাণীর মামলা জালে জড়িয়ে সবশেষে সর্বস্বান্ত হয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও তারই প্রতিবেশী ব্যবসায়ী বলাই চন্দ্র পালের ছেলে পলাশ পাল। ২০১৭ সালের ১৯ মে রীতা রাণীর বাবা নবীনগর উপজেলা সদরের আদালত পাড়ার বাসিন্দা অনিল দেবনাথ (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। কিন্তু রীতা এই ঘটনায় তারই প্রতিবেশী বলাই চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রী মিনা রাণী পাল এবং ছেলে পলাশ পালসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

পলাশ পাল বলেন, ‘রীতার বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে বাড়িতে গ্যাস সংযোগ নেয়া ও চলাচলের রাস্তা নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ হয়। এ বিরোধের জেরে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন রীতা। অবশ্য পরে ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফারজানা আহমেদ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলাটি খারিজ করে দেন।’

মামলা খারিজের পর রীতা তারই আরেক প্রতিবেশী শুকলালকে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। পরে ২০১৯ সালের ২৯ মে শুকলাল হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি রীতা। তিনি একই বছরের ১০ জুলাই শুকলালের সঙ্গে পলাশ পালকে জড়িয়ে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পলাশ পাল প্রায় চার মাস কারাভোগ করেন।

মামলা ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, মামলাটির সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাপক তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওই প্রতিবেদনে তিনি মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির প্রার্থনা করেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার পরিধেয় পোশাক থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশের ফরেনসিক বিভাগে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় আসামিদের সঙ্গে নমুনার মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রদত্ত চিকিৎসা সনদেও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।

সেখানে আরও বলা হয়, পূর্ব শত্রুতা ও মামলার আক্রোশ জনিত কারণে বাদী মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে এই দুই আসামিকে হয়রানি ও নাজেহাল করার জন্য মামলাটি দায়ের করে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়েরের কারণে বাদী রিতা রাণী দেবীর বিরুদ্ধে একই আইনের ১৭ ধারায় বিচার ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন করেন।

এই বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পলাশ পালকে খালাস ও ওই নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিষয়ে আদালতে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে