প্রকাশিত : ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:২২

হীরার নেকলেস কিনে ফেঁসে গেল প্রতারক

অনলাইন ডেস্ক
হীরার নেকলেস কিনে ফেঁসে গেল প্রতারক

প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বরিশালের এক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর হীরার নেকলেস কিনে ফেঁসে গেছেন প্রতারক চক্রের এক সদস্য। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে হীরার নেকলেসটি কেনার পর বিকাশের মধ্যমে টাকা পরিশোধ করেন প্রতারক রফিকুল ইসলাম (২৬)। সেই সূত্র ধরেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা তার পরিচয় শনাক্ত করেন।

শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় তাকে আটক করে শনিবার বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়।

শনিবার (০৩ মার্চ) রাতে রফিকুলকে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন রফিকুল। তিনি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার শাহাপুর গ্রামের মো. ইয়াসিনের ছেলে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বরিশাল শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হাতেম আলী জানান, গত নভেম্বর মাসে পুলিশ সদর দফতর থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় সিআইডিকে। মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মো. শাহজাহান হাওলাদার। তার বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার গাড়রিয়া ইউনিয়নের বালিগ্রামে।

বাদী শাহজাহান হাওলাদার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ১১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তার মুঠোফোনে একটি কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয় বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করা হয়েছে। কিন্তু সেটি ছিল আসলে প্রতারকের ফোন। এরপর প্রতারণা করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। পরে স্বজনদের পরামর্শে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাকেরগঞ্জ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি মামলা করেন।

পুলিশ সুপার মো. হাতেম আলী বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্য রফিকুল ইসলামের পরিচয় শনাক্তে আনেক বেগ পেতে হয়েছে। আসামি শনাক্তে একটি মুঠোফোনের সিম নম্বর ছাড়া আর কোনো ক্লুই ছিল না। সেই সিমটিও ছিল ছদ্মনামে কেনা। ঘটনার পর সিমটি বন্ধ রাখা হয়। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। বন্ধ সিমটির নম্বরে আগে আসা-যাওয়া কলের তালিকা অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে আমরা সফলতা পাই।

তিনি বলেন, রফিকুল ইসলামের একসময় মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জ ও সিম বিক্রির দোকান ছিল। সেখান থেকে তিনি প্রতরণার কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের সদস্য রয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ৩০ থেকে ৪০ জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বরিশাল শাখার এসআই মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ইসলাম গ্রেফতারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নানান কৌশল অবলম্বন করে আসছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রতারণার ঘটনায় সঙ্গে তিনি যুক্ত। তবে তিনি প্রমাণ রাখতেন না। প্রতারণার কাজে কয়েকটি কোম্পানির অনেকগুলো সিম ব্যবহার করতেন। সেগুলো একটিও তার নামে কেনা হয়নি। প্রতারণার পর ওই সিম তিনি আর ব্যবহার করতেন না। তাছাড়া কোনো স্থানে তিনি কয়েকদিনের বেশি অবস্থান করতেন না। অবস্থান বদলাতে থাকতেন। এসএসসি পাস রফিকুল ইসলাম প্রযুক্তি নিয়ে কোনো পড়াশোনা না করলেও আইডি-পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে পারেন।

এসআই মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মো. শাহজাহান হাওলাদারের টাকা হাতিয়ে নেয়ার মামলাটি এর আগে বাকেরগঞ্জ থানার একজন এসআই তদন্ত করেন। তবে তিনি কিনারা করতে পারেননি। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। একটি বন্ধ সিম নম্বর ছাড়া আর কোনো ক্ল্ইু ছিল না। সিমটির কললিস্ট যাচাই করে জানা যায় সিমটির নম্বরের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের একটি বিকাশ নম্বরে এক লাখ ৯৩ হাজার ৪২৮ টাকা পাঠানো হয়েছে। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, গত ১১ আগস্ট এক ব্যক্তি অনলাইনের মাধ্যমে একটি হীরার নেকলেস অর্ডার করেন। সেই ব্যক্তি বিকাশের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করেন। ওইদিনই ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে তিনি হীরার নেকলেসটি বুঝে নেন।

ফরহাদুল ইসলাম আরও বলেন, সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে নেকলেস কেনা ব্যক্তির ছবি পেয়ে যাই আমরা। এরপর পরিচয় জানতে বিভিন্ন থানায় ছবি পাঠানো হয়। একপর্যায়ে জানা যায় হীরার নেকলেস কেনা ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। ঠিকানা সংগ্রহের পর জানা যায় রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন বাড়িতে যাননি। দুদিন আগে জানতে পারি নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় রফিকুল ইসলাম অবস্থান করছেন। এরপর শুক্রবার রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে