প্রকাশিত : ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:৩০

অত্যাধুনিক ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে বেনাপোল সীমান্ত

অনলাইন ডেস্ক
অত্যাধুনিক ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে বেনাপোল সীমান্ত

সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাজুড়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নজরদারি নিশ্চিতকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর যশোরের বেনাপোলের পুটখালীতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’ (এসবিএসএস) স্থাপন করা হয়। এই সিস্টেমেই এখন ২৪ ঘণ্টা বিজিবির নজরদারিতে রয়েছে বেনাপোল সীমান্ত। ওই সীমান্তের যে কোনো এলাকা দিয়ে মানুষ, প্রাণী কিংবা যানবাহন পাচার অথবা অনুপ্রবেশ করলে তা ধরা পড়ছে পুটখালীতে বিজিবি ক্যাম্পের এসবিএসএস টাওয়ারের লংরেঞ্জ ক্যামেরা কিংবা থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরায়। আর সেটা দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারছে বিজিবি।

 এ সিস্টেমের মাধ্যমে সীমান্তে সংশ্লিষ্ট ‘কমান্ড’ পর্যায় থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিট ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে সীমান্তের নজরদারির লক্ষ্যে বিজিবি সদরদফতর, পিলখানায় সর্বাধুনিক কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ সিস্টেম মাদক, অস্ত্রসহ সব ধরনের চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে 

বিজিবি সূত্র জানায়, ভারতের সীমান্ত দিয়ে ইছামতী নদী হয়ে ৯ কিলোমিটার বাংলাদেশের সীমান্তের যে কোনো প্রান্তে কোনো কিছু অনুপ্রবেশ কিংবা পাচারকালে ধরা পড়ে টাওয়ারে বসানো ক্যামেরায়। বেনাপোলের ইছামতীর এপার-ওপার, দুই পারই এখন বিজিবির নজরদারিতে। এতে করে নদী ব্যবহার করে অপরাধ করার চেষ্টা করলেও টাওয়ারে বসানো ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না কেউ। সীমান্তে টহল কার্যক্রম ও সার্বক্ষণিক নজরদারি, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধসহ সব ধরনের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনায় সহায়ক মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এসবিএসএস।

বিজিবি জানায়, এই সিস্টেম স্থাপনের ফলে এ পর্যন্ত এক কোটি ৭৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার মাদক ও অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে আট হাজার ৩৩১ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৩৩ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা। ওই বছর ৯০ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ভারতীয় পণ্যসহ আটক করা হয় ১৪ জনকে। আর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক করা হয় চার ভারতীয় নাগরিককে।

পরের বছর ২০২০ সালে বিজিবি জব্দ করে পাঁচ হাজার ৭২৪ বোতল ফেনসিডিল, যার আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ ১৩ হাজার ৭৪০ টাকা। ২০ লাখ ১৩ হাজার টাকার ভারতীয় পণ্যসহ আটক করা হয় একজনকে। এছাড়া এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জব্দ করা হয়েছে এক হাজার ৮৯৬ বোতল ফেনসিডিল, যার আনুমানিক মূল্য সাত লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ টাকা।

বিজিবি বলছে, যশোর বেনাপোল সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে সর্বাধুনিক এই এসবিএসএস প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে সীমান্তের প্রায় নয় কিলোমিটার এলাকা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বিজিবির নজরদারিতে। এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও তৎক্ষণাৎ ছবি/ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে টাওয়ারে বসানো থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার মাধ্যমে।

যেভাবে কাজ করে ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’
বিজিবির সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ‘যুগান্তকারী’ এ সিস্টেম অর্থাৎ এসবিএসএসে ৪৬.৫ মিটার বা প্রায় ১৫৩ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারের ওপরে অত্যাধুনিক দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা রয়েছে। যার একটি লংরেঞ্জ ক্যামেরা, যা দিনের বেলায় কাজ করে। অন্যটি থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা। যা রাতের বেলায় অথবা ঘন কুয়াশার মধ্যে কাজ করে।

এসবিএসএসের সহায়ক হিসেবে সীমান্তে ১৯টি রিপিটার পোল রয়েছে। এক পোল থেকে আরেকটি পোলের দূরত্ব ৫০০ মিটার। প্রত্যেকটি রিপিটার পোলে দুটি করে ডিভাইস লাগানো রয়েছে। যা কানেকটিং ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। টাওয়ারের ওপরে এসবিএসএম নামে একটি ডিজিটাল ডিভাইস রয়েছে। সীমান্তে রিপিটার পোল থেকে যদি কোনো সিগন্যাল আসে সেই সিগন্যালটি এই ডিভাইস রিসিভ করবে। এছাড়া সীমান্তে শূন্য লাইনে সেন্সরবিশিষ্ট ছয় ফুট ক্যাবলের মাধ্যমে একটি পোল থেকে আরেকটি পোলের মধ্যে সংযোগ রয়েছে।

সীমান্তের কোনো একটি দিক দিয়ে কোনো মানুষ, প্রাণী কিংবা কোনো যানবাহন অতিক্রম করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই সেন্সর ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পনের সৃষ্টি করে। কম্পনটি পোলে থাকা ডিভাইসে রিসিভ করে শক্তিশালী একটি সিগন্যালে পরিণত করে। এরপর পোল থেকে এন্টেনার মাধ্যমে ইথারনেট হয়ে টাওয়ারের ওপরে এসবিএসএম ডিভাইসে প্রেরণ করে। সিগন্যাল প্রেরণ করা মাত্রই কম্পিউটারে ভেসে ওঠে। তখন কম্পিউটারে ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যায়, ১৯টি পোলের কোন পোল থেকে সিগন্যালটি এসেছে এবং ক্যামেরা তখন ওই পোলে ফোকাস করতে থাকে। ক্যামেরায় দেখার পরে কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়্যারলেসে বিজিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই পোলের এলাকা তল্লাশি করে দেখবেন, কোনো মানুষ, যানবাহন কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর জন্য সংকেত এসেছে কি-না। এটি রাতে কিংবা দিনের যে কোনো সময় ঘটলেই পাওয়া যাবে।

বিজিবি জানায়, স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের (এসবিএসএস) জন্য যশোর সীমান্তে বিজিবি এবং বিএসএফের দুটি বিওপির (দৌলতপুর ও কল্যাণী) দায়িত্বপূর্ণ ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকাকে অপরাধমুক্ত এলাকা হিসেবে ষোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণায় ওই এলাকায় সীমান্ত অপরাধসহ চোরাচালান আশাতীতভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে।

এসবিএসএসের বিষয়ে বিজিবি যশোর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূঞা বলেন, স্পর্শকাতর এলাকাজুড়ে বিজিবির নজরদারি নিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’ (এসবিএসএস) কাজ করছে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে সীমান্তে সংশ্লিষ্ট ‘কমান্ড’ পর্যায় থেকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিট ছাড়াও কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে সীমান্তের নজরদারির লক্ষ্যে বিজিবি সদরদফতর, পিলখানায় সর্বাধুনিক কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ সিস্টেম মাদক, অস্ত্রসহ সব ধরনের চোরাচালান ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে