নন্দীগ্রামে বোরো ধানের বাম্পার ফলন : ঘরে তোলার অপেক্ষায় কৃষক
![নন্দীগ্রামে বোরো ধানের বাম্পার ফলন : ঘরে তোলার অপেক্ষায় কৃষক](./assets/news_images/2021/04/18/02.jpg)
বগুড়ার নন্দীগ্রামে বোরো ধানের মাঠ এখন পাকা ধানের সোনালী হাসি । উজ্জল রোদে সেই হাসি আরো ঝলমল করে উঠছে । আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে । এতে কৃষকের মন ভরে উঠেছে ঠিকই কিন্তু তা বেশিক্ষন ধরে রাখতে পারবে কিনা জানা নেই কারো। কারন, আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হলেও সম্প্রতি কয়েকদফা কালবৈশাখীর আভাস পেয়েছে তাই সোনার ফসল ঘরে উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে করোনার সময় সব ধরনের কৃষি পন্যের দাম বাড়ার কারনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে । কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষক যদি তাদের পণ্যের সঠিক দাম পায় তাহলে সমস্যা নেই। কৃষকের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি পড়লে সীমিত আয়ের লোকজন দূর্ভোগে পড়বে সে দিকটাও সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে। নন্দীগ্রাম কৈগাড়ী গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন জানান, এবার প্রতি বিঘা বোরো চাষে ধান কাটার খরচ বাদে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তার মতে, এক বিঘা জমিতে বীজ বাবদ ৪শ ৫০ টাকা, হালচাষ ৯শ টাকা, চারা লাগানো ১হাজার টাকা, সেচ খরচ বাবদ ১২শ টাকা, সার বাবদ ২ হাজার টাকা, কীটনাশক বাবদ ১ হাজার টাকা, পরিচর্যা বাবদ ৫শ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এখন পর্যন্ত জমিতে ধান ভালোই দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে। সে হিসেবে প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৫ মন ধান হতে পারে। হাটলাল গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, এবার ধান ভালোই হছে। হামাকেরে এলাকাত ধান কাটা শুরু হচে। আর কয়দিনের মদ্দে পুরোদমে শুরু হবি। এখন প্রকৃতি কিরকম আচরন করবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। উপজেলার বিভিন্ন ধানের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র নতুন ধান হিসেবে মিনিকেট ধান ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য জাতের নতুন ধান বাজারে আসতে এক থেকে দু,সপ্তাহ সময় লাগবে বলে ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন। উপজেলার রিধইল গ্রামের কৃষকরা জানান, এবার ফসল ভালো হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারনে গত বছর শ্রমিক আসতে পারেনি তাই বেশি দামে ধান কাটতে হয়েছে। এবারও লকডাউন এবারো যদি শ্রমিক না আসে তাহলে লাভের পরিমান অনেক কম হবে। আবার গ্রামের শ্রমিক পেলেও তাদের দিতে হয় অতিরিক্ত মজুরি। কৃষকের লাভ লোকশান সবকিছু নির্ভর করবে ধানের বাজার মূল্যে ও শ্রমিকের উপর। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজার মূল্যে সন্তোষজনক হলে ও শ্রমিক সংকট না হলে লাভবান হবে কৃষক। এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৯ হাজার ৭শ ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ধানের ফলন আশানূরূপ হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে । কৃষকদের সবচেয়ে ব্যয় বহুল ঝুকিপূর্ণ আবাদ হচ্ছে ইরি-বোরো চাষ। বোরো ধান দেশের খাদ্য চাহিদা পুরনের প্রধান ভূমিকা রাখে। তাই এবারো কৃষকরা মাঠের ফসলি জমির প্রতি যত্নশীল হয়েছিল। সে কারণে ভালো ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী ধান পাবে। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আদনান বাবু জানান, বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের সঠিক পরামর্শ ও কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমে এবার উপজেলায় বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন