প্রকাশিত : ৫ মে, ২০২১ ২৩:১৬

বগুড়ায় মাঠে মাঠে কাটছে ধান চাল দিতে মিলারদের প্রস্তুতি শুরু

এইচ আলিম
বগুড়ায় মাঠে মাঠে কাটছে ধান 
চাল দিতে মিলারদের প্রস্তুতি শুরু

বগুড়ার মাঠে মাঠে একদিকে বোরোর ধান কাটা চলছে। অপর দিকে আগামজাতের ধান মাড়ায় করে হাটে হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। কাঁচা ও শুকনা ধানের দাম এবারে ভাল বলে দাবী করেছেন চাষিরা। হাটে ধান উঠায় সরকারিভাবে চাল দিতে মিলাররা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বগুড়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তারা জেলার চালকল মিলারদের সাথে বৈঠকও করেছেন। বৈঠক থেকে আগামী ৯ মের মধ্যে মিলাররা চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হবেন। 

বগুড়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়ার অটো মেজর ও হাসকিং রাইচ মিল মালিকদের সাথে ৫ মে এক বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হবেন এবং সরকারিভাবে ৪০ টাকা কেজি দরে চাল প্রদান করবে। আগামী ৯ মে এর মধ্যে বগুড়ার মিলাররা চাল দিতে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবেন। জেলায় ৬০ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন বোরোর চাল সংগ্রহ করা হবে। এই চাল সংগ্রহ করতে গিয়ে মিলারদের উৎসাহিত করতে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। 
বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম আমিনুল হক দুদু জানান, ৫ মে বুধবার বগুড়ার কর্মকর্তাদের সাথে এক আলোচনা থেকে চাল প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪০ টাকা কেজি দরে মিলাররা চাল প্রদান করবে। যদিও বাজারে ধানের মন এখন ৮৮০ টাকা। সেই ধান শুকিয়ে চাল করে শ্রমিক খাঠিয়ে সরকারের ঘরে পৌঁছাতে চালের কেজিতে খরচ পড়বে বেশি। আর চাল করতে গিয়ে ক্ষুদ ও তুষ থেকে মিলারদের এবার আয় করতে হবে। তিনি জানান, ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে চাল প্রদান করা হবে। জেলায় সমিতির আওতায় প্রায় ২ হাজার মিল মালিক রয়েছেন। যেখানে শ্রমিক রয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ। সরকারের ঘরে চাল দিতে মিলাররা প্রস্তুতি নিয়েছে। 
বগুড়া জেলা খাদ্যকর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামান জানান, বগুড়ায় মিলার সাথে বৈঠক হয়েছে। ৯ মে এর মদ্যে মিলারদের সাথে চুক্তি শেষ হবে। কোন মিলার কতটুকু চাল দিবেন সে বিষয়ে বলা হচ্ছে। বগুড়ায় বোরোর চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হবে। এখানে বোরোর ভাল ফলনের কারণে চাল সংগ্রহে কোন সমস্যা হবে না। 
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসের শেষ থেকে বগুড়ায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়। আর এবার এপ্রিল মাসের শুরুতে লকডাউনে ঘোষণায় কৃষকরে মনে শঙ্কা দেখা গেলেও আপাতত সেই শঙ্কা আর নেই। বগুড়ার মাঠে মাঠে ধান পেকে যাওয়ার পর নিজের পরিবার নিয়ে কোথাও ধান কাটছে, আবার জেলা ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ধান কেটে দিচ্ছে। আবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য বিভিন্ন শর্তে প্রদান করেছে হারভেস্ট মেশিন। যে মেশিন কিছু সময়ের মধ্যেই এক বিঘা জমির ধান কাটা মাড়ায় হয়ে যায়। কোথাও কোথাও আবার ধানকাটার শ্রমিকরা ধান কাটছে। করোনার কারণে এবার শ্রমিকদের মাথাপিছু গুণতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে। তারপরও থেমে নেই ধানকাটা পুরোদমে চলছে ধানকাটার মৌসুম। চরতি মে মাসে করোনা ভাইরাসের প্রভাব থাকলেও কৃষি শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়নি। সংকট না থাকায় বোরো ধান কাটতে নেমে পড়েছে চাষিরা। অধিকাংশ এলাকায় ধান কাটার শ্রমিকরা মাস্ক, গ্লাবসসহ অন্যান্য নিয়ম অনুযায়ি ধান কাটার কাজ শুরু করেছে বলে দাবী করেছে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কোন কোন এলাকায় চাষিরা ধান কেটে হাটে বাজারে বিক্রি শুরু করেছে। কাঁচা ধান ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে আর শুকনা ধান ভাল মানের ১ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি বছর ২০ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৬ টন। 
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জেলার ১২ উপজেলার বোরো চাষিরা সময়মত বোরো চাষ করেছে। চাষবাস শেষে এখন ফলন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। জেলায় এবার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও সেখানে বোরা চাষ হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৫ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং পরিবেশ দূষণ কম থাকার কারণে ফলন বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার /  সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে