প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০২১ ০০:০৯

বগুড়ায় বোরোর ফলনের সঙ্গে ধানের দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি

এইচ আলিম
বগুড়ায় বোরোর ফলনের সঙ্গে ধানের 
দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি

করোনা ভাইরাসের মধ্যেই ভাল খবর পেয়েছে বোরো চাষিরা। ধানের ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবছর বোরো ধান সব্বোর্চ ১১’শ টাকা মন বিক্রি হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত জেলায় ধান কাটা শেষ হয়েছে। অল্প কিছু ধানকাটা বাকি রয়েছে জেলার পশ্চিমাঞ্চলে। কয়েকদিনের মধ্যে সেসব ধানও কাটা শেষ হয়ে যাবে। জেলার বেশিরভাগ হাটে বাজারে বেশ কিছু দিন আগে থকেই ধান ও চাল কেনাবেচা শুরু হয়েছে। 
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসের শেষ থেকে বগুড়ায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়। আর এবার এপ্রিল মাসের শুরুতে লকডাউনে ঘোষণায় কৃষকরে মনে শঙ্কা দেখা গেলেও আপাতত সেই শঙ্কা আর নেই। বগুড়ার মাঠে মাঠে ধান পেকে যাওয়ার পর শুরুতে নিজের পরিবার নিয়ে কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হলেও পরে এসে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে। জেলার বেশিরভাগ উপজেলার ধান কাটা শেষ হয়েছে। মে মাসে করোনা ভাইরাসের প্রভাব থাকলেও কৃষি শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়নি। সংকট না থাকায় বোরো ধান কেটে চাষিরা হাটে বিক্রি করেছে। শুরুতে কাঁচা ধান ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে। এরপর শুকনা ধান ১ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়। পরে চিকন ধান বিক্রি হয়েছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা মন। বর্তমান বাজারে হাজার টাকা মন দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। 
বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাঁচপীর এলাকার বোরো চাষি আব্দুল বাসেদ জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ, সার, চাষ, সেচসহ বিক্রি পর্যন্ত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। সড়কের পাশে জমি হলে খরচ কম হয়। জমি ভেদে ২০ থেকে ২২ মন ধান পাওয়া যায়। এবার বাজারে দাম থাকায় কিছুটা হলেও লাভের দেখা গেছে। হাটে এখন শুকনা ধান বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা মন। ধানের দাম এমন থাকলে কৃষকরা লাভ পাবে এবং ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। গত বছর ধান বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জেলার ১২ উপজেলার বোরো চাষিরা সময়মত বোরো চাষ করে। চাষবাস শেষে ফলন ঘরে তুলে কেনাবেচা করছে চাষিরা। জেলায় এবার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও সেখানে বোরা চাষ হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৫ হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং পরিবেশ দূষণ কম থাকার কারণে ফলন বেড়ে যাবে বলে দাবী করা হয়েছে।
বোরো চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে শুকনা ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৫০ টাকা মন। এবার ধান বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২৫ মণ ধান হয়েছে। গতবছর বাজারে ধান বিক্রি করে শেষ পর্যন্ত কিছু আয় হয়েছিল। এবার বাজারে শুরুতেই ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন বিক্রি হয়। পরে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা মন ধান বিক্রি হয়েছে। এদামে বিক্রি করতে পারলে আয় হবে। 
ধান ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা প্রতি মণ ধান ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দরে অপরদিকে শুকনা প্রতি মণ ধান ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হয়েছে। 
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। গত বছেরর মত এবছরও ভাল ফলন পাওয়া গেছে। জেলায় বেশিরভাগ উফশী বা উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ফলেনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার থেকে বেড়ে গিয়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে ফলন পাওয়া বলে আশা করা হচ্ছে। মোটা ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন আর চিকন ধান ১১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। 
বগুড়া জেলা খাদ্যকর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামান জানান, বগুড়া জেলায় ৭১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২৫ হাজার ৪৪ মেট্রিক বোরো ধান সংগ্রহের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা 

দৈনিক চাঁদনী বাজার /  সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে