রক্তাক্ত মাথা নিয়েও বগুড়া শজিমেকে রোগীর সফল অপারেশন করলেন ডা: পল্লব
![রক্তাক্ত মাথা নিয়েও বগুড়া শজিমেকে
রোগীর সফল অপারেশন করলেন ডা: পল্লব](./assets/news_images/2021/06/14/Pallab-sen.jpg)
ব্যস্ততম হাসপাতাল বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে সারাদিন চক্ষু বিভাগের আউটডোরে রেফার্ড করা ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখা শেষ করে গিয়েছেন অপারেশন টেবিলে। দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে ৩ জন দরিদ্র রোগী যাদের করতে হবে চোখের ডিসিআর অপারেশন। আউটডোরে রোগী দেখা শেষ করেই বাসনা রানী নামের এক বয়স্ক নারীর অপারেশন সফলভাবে শেষ করে উঠার সময় হঠাৎ মাথার উপরে থাকা ভারী মাইক্রোস্কোপের সাথে মাথায় সজোরে আঘাত লাগে সাথে শব্দও হয় বিকট।
মাথায় ব্যাথা থাকলেও সেটিকে অগ্রাহ্য করেই ফেন্সি বেগম নামে আরেক রোগীর অপারেশন শুরু করেন ডাক্তার কারণ রোগীটি এসেছে অনেক দূর থেকে বারবার আসার হয়তো পয়সাও নেই তাদের কাছে। এদিকে অপারেশনের মাঝপথে দেখা গেলো ডাক্তারের মাথায় পরিহিতি ক্যাপ দিয়ে রক্ত অনবরত চুয়ে চুয়ে পরছে যাতে ভিজে গেছে ডাক্তারের পরনে থাকা গাউন আর রক্ত গাল বেয়ে পরেই যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ নার্গিস বেগম দ্রæত মাথায় বরফ চেপে ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন অপর ডাক্তারদের। নিজের মাথা দিয়ে রক্ত পরছে কিন্তু অপারেশন বন্ধ করার তো উপায় নেই কারণ রোগীর অপারেশন তখনও মাঝ পথে। এমতাবস্থায় ছুটে আছে শজিমেকের উপাধ্যক্ষ নিউরোসার্জন ডা: সুশান্ত কুমার এবং নিউরোসার্জন ডা: মিল্টন তারা এসে তার মাথায় বিভিন্নভাবে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে। একদিকে নিজের মাথা দিয়ে রক্তক্ষরণ অন্যদিকে অপারেশন টেবিলে থাকা রোগীর সফলভাবে অপারেশন করার চ্যালেঞ্জ এইভাবেই দীর্ঘ ৪০ মিনিট চলার পর সফলভাবে শেষ করেন রোগীর চোখের অপারেশন। নিজের কথা না ভেবে দায়িত্ববোধের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে একজন রোগীর চিকিৎসা প্রদানের এমন বিরল ঘটনা ঘটেছে গত ১২জুন দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর এই অপারেশনটি করেছেন বগুড়ার মানবিক ডাক্তার খ্যাত শজিমেকের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: পল্লব কুমার সেন। বিভিন্ন সময় ডাক্তারদের নিয়ে হাজারো নেতিবাচক কথা শোনা গেলেও বাস্তবে প্রতিনিয়ত তাদের যে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তারই এক উদাহরণস্বরুপ উপরের এই কথাগুলো আবেগঘনভাবে বলছিল সেদিন সেই অপারেশন থিয়েটারে থাকা ও.টি ইনচার্জ নার্গিস বেগম।
করোনাকালীন সময়ে একটি দিনের জন্যেও যে মানুষটি সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া বন্ধ করেননি এ প্রসঙ্গে সেই ডা: পল্লব কুমার সেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, দেশব্যাপী এমন পরিস্থিতির মাঝেই হয়তো হাজারো ডাক্তার এইভাবে চেষ্টা করেন রোগীকে সেবাপ্রদানের। স্বার্থহীন মনোভাব এবং ত্যাগের মাঝেই তো প্রকৃত সুখকে খুঁজে পাওয়া যায়। সেদিনের ঘটনাটি তার জীবনে অন্যতম একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। এখন তিনি কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, আঘাতটি বেশ সজোরে লেগেছিল বেশ রক্ত পরলেও সিটিস্ক্যান রিপোর্ট ভাল আছে। প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ শেষে সে পুনরায় স্বাভাবিকভাবেই রোগী দেখছে মর্মে জানান। উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও জেলার কৃতি সন্তান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: পল্লব কুমার সেন ২০০১ সালে বগুড়া শজিমেক থেকে এমবিবিএস পাশ করেন, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় থেকে শেষ করেন এমএস (চক্ষু) এবং ২০১৪ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদ এলভি প্রসাদ আই ইন্সটিটিউট থেকে গøুকোমা বিষয়ে ফেলোশিপ অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে প্রথম যোগদান করেছিলেন বগুড়া কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালটেন্ট হিসেবে ২০১৬ সালে পরবর্তীতে ২০১৭ সালে যোগদান করেন বগুড়া শজিমেকে। মাঝে ২০১৯ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুরে। সেখানে সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে মানবিক এই ডাক্তার সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে।
তার পেশাগত জীবনে হাজার হাজার দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে করেছেন চোখের বিভিন্ন জটিল অপারেশন এবং মানবিকভাবে করোনাকালের শুরু থেকেই বগুড়াতে সাধারণ মানুষের সেবায় সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন এই মানুষটি। গত ১২জুনের ঘটনাতে ডা: পল্লব কুমার সেনের এমন দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা কে সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশব্যাপী প্রতিটি স্থানে এমন হাজারো পল্লব সেন এভাবেই মানবিতার আলো ছড়াবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বগুড়ার সাধারণ মানুষের অনেকেই।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন