প্রকাশিত : ৯ অক্টোবর, ২০২১ ২১:৩৯
‘এত দিন রাতের আধাঁরে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করা হলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তা এখন প্রকাশ্যে করা হচ্ছে’

ধুনটে যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

হুমকির মুখে বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প
ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট (বগুড়া) থেকে :
ধুনটে যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিনে
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ি ঘাট এলাকার যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তবে এত দিন রাতের আধাঁরে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করা হলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তা এখন প্রকাশ্যে করা হচ্ছে।

জানাযায়, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে যমুনা নদী। বার বার নদী ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রাম। ওই সব গ্রামের লোকজন যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে, বাঁধের উপর সহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। যমুনায় বিলীন হওয়া গ্রামের মধ্যে বৈশাখী ও রাধানগর গ্রাম অনেক বছর আগেই চরাঞ্চল হয়ে জেগে ওঠে। শুষ্ম মৌসুমে ভাঙ্গন কবলিক মানুষজন বৈশাখী ও রাধা নগর চরে এবং চরাঞ্চলে ফসল ফলিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। 
কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরির মাধ্যমে রাতের আঁধারে ভাসমান লঞ্চ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদী পথে বিক্রি করে আসছে। 
ইতিপূর্বে অসংখ্যবার অভিযান পরিচালনা করে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা সহ বালু ব্যবসায়ীদের কারাদন্ডও প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে ধুনট পুলিশের সহযোগিতায় ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও এসিল্যান্ড বরকতউল্লাহ্ পৃথক অভিযান চালিয়ে ৪টি ড্রেজার মেশিন জব্দ এবং ১৪ জনকে আটক করে ১ মাস করে কারাদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি প্রভাবশালীদের অবৈধ বালুর কারবার। 
শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়ী যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষন প্রকল্পের পাশেই ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে জমা করা হচ্ছে। সেই সময় পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন বালু ব্যবসায়ী হযরত আলী। তিনি ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক ইউপি সদস্য। তিনি গত ২ দিন ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে ডেজ্রার মেশিনের সাহায্যে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে শহড়াবাড়ি ঘাটে জমা করে সেখান থেকে অবৈধভাবে বিক্রি করছেন। ২০১৯ সালে অবৈধ বালু উত্তোলন করার দায়ে অভিযান চালিয়ে হযরত আলীর কোটি টাকার বালু জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।   
স্থানীয় লোকজন জানায়, হযরত আলী সহ প্রায় ১০/১২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই অবৈধ বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। তাদের নেতৃত্বেই প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে যত্রতত্রভাবে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে নদীপথে বিক্রি করে আসছে। ধুনট উপজেলার যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁদা দিতে হয় প্রতি জ্রেজার মালিকদের ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।     
তবে কিছু দিন আগেও লুকোচুরি করে বালু উত্তোলন করলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হযরত আলী গত দুই দিন ধরে প্রকাশ্যে যমুনায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে।
বৈশাখী চরের বাসিন্দা আজিজার রহমান জানান, তিনি গত বছর বৈশাখী চরে বসবাস করলেও এবছর তার ফসলী জমি সহ ভিটেমাটিও কেটে নিয়ে গেছে বালু ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক দিন ধরে সাবেক মেম্বার হযরত আলী ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে প্রকাশ্যে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। অব্যাহত বালু উত্তোলনের কারনে নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ও বাঁধ এখন হুমকির মুখে পড়ছে। 
তবে এব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, বগুড়া জেলা পরিষদ থেকে শহড়াবাড়ী ঘাট ইজারা নিয়েছি। কিন্তু বালুর চর জেগে ওঠায় সবার থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েই বালু উত্তোলন করে নৌ পথ চালু করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, যমুনা নদীতে অসংখ্যবার অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে ১ মাস করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়। তবে আবারও যদি যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়, তাহলে খোঁজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে