প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২১ ২২:১৯

ম্যানেজ করেই নাকি, ধুনটের যমুনা থেকে বালু উত্তোলন করছেন হযরত!

একাধিক ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প
ইমরান হোসেন ইমন, ধুনট (বগুড়া) থেকে :
ম্যানেজ করেই নাকি, ধুনটের যমুনা থেকে বালু উত্তোলন করছেন হযরত!

বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ি ঘাট এলাকার যমুনা নদী থেকে একাধিক ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন হযরত আলী নামে এক সাবেক ইউপি সদস্য।

তবে কোন প্রকার টেন্ডার বা সরকারি কোন অনুমোদন না নিলেও গত এক সপ্তাহ ধরে হযরত আলী প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৫/৬টি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে শহড়াবাড়ি ঘাটে জমা করে সেখান থেকে বিক্রি করে আসছেন।
এদিকে যমুনায় একাধিক ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। 
এব্যাপারে শহড়াবাড়ি বাঁধ এলাকার রকমত উল্লাহ্ ও হাফিজার রহমান সহ স্থানীয় লোকজন বলেন, ম্যানেজ করেই নাকি, ধুনটের যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন হযরত আলী! তিনি প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন ও শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করেই নাকি, তিনি এভাবেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। 
শিমুলবাড়ি গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, কিছু দিন আগে বালু উত্তোলনের অভিযোগে আমাদের গ্রামের কয়েকজন শ্রমিককে আটক করে এক মাস করে কারাদন্ড দেয়া হয়। তারা এখনও জেলে রয়েছে। কিন্তু এখন প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে, এটা কারো নজরে পড়ছে না কেন ? 
বৈশাখী গ্রামের ছকিতন বেওয়া আক্ষেপ করে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘স্থানীয় মস্তানেরা আমগরে ভয় দ্যাকাইয়া চরে আমগরে ভিটে মাটিও ক্যাইটা নিয়্যা গেতেছে।’
সরেজমিন জানাযায়, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে যমুনা নদী। বার বার নদী ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রাম। ওই সব গ্রামের লোকজন যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে, বাঁধের উপর সহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। 
যমুনায় বিলীন হওয়া গ্রামের মধ্যে বৈশাখী ও রাধানগর গ্রাম অনেক বছর আগেই চরাঞ্চল হয়ে জেগে ওঠে। শুষ্ম মৌসুমে ভাঙ্গন কবলিক মানুষজন বৈশাখী ও রাধা নগর চরে এবং চরাঞ্চলে ফসল ফলিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। 
কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরির মাধ্যমে দিনে ও রাতে আঁধারে ভাসমান লঞ্চ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। প্রকাশ্যেই চলছে বালু উত্তোলন ও বেচা-বিক্রির কারবার।
তবে অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে দাম্ভিকতার সঙ্গে বালু ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, স্থানীয় প্রশাসন সহ শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি এই অবৈধ বালু মহাল চালাচ্ছেন।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়গুলো ইউএনও সাহেব দেখভাল করেন। পুলিশের সহযোগিতা লাগলে অবশ্যই সেটা করা হবে।  
তবে এব্যাপারে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, যমুনা নদীতে অসংখ্যবার অভিযান পরিচালনা করে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে জেল ও লক্ষাধিক টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। 
তবে এসব বিষয়ে ম্যানেজের কোন সুযোগ নেই। ব্যস্ততার কারনে অভিযান চালাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে