প্রকাশিত : ৭ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:৩৩

আলুর বাজারে “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ”

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আলুর বাজারে “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ”

লাভের আশায় হিমাগারে রাখা কৃষকের আলু যথা সময়ে বেচাকেনা করতে না পারায় এবছর আলুতে অনেকটায় লোকশান পোহাতে হচ্ছে হিমাগারে আলু রাখা কৃষকদের। দেশিয় কৃষি উৎপাদনে দ্বিতীয় অর্থকরি ফসল আলুর বাজারের এমন অবস্থা দেখে হতাশ প্রান্তিক কৃষকেরা। লাভ তো দুরের কথা, বর্তমানে হিমাগারে রাখা আলু বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও প্রতি বস্তা আলুর প্রকারভেদে পাইকারি মূল্য সাড়ে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা আলু প্রকারভেদে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়। শেষ মুহুর্তে আলুর এই দাম বৃদ্ধিতে লোহা লবন সমানে সমান কৃষকের।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আফিয়া কোল্ড ষ্টোরেজ (প্রাঃ) লিঃ এর ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, এবছর প্রতি বস্তা আলুর ক্রয় মূল্য, হিমাগর ভাড়া ও লেবার খরচসহ ব্যবসায়ীদে প্রতি বস্তায় খরচ পড়েছে ১ হাজার থেকে ১১ শ’ টাকা।

উপজেলার আমিরপুর গ্রামের আলু ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, লাভের আশায় আফিয়া কোল্ড ষ্টোরেজে ৬’শ বস্তা আলু মজুত রেখেছিলাম। বর্তমান বাজার অনুযায়ী লোকশান হবে। একই এলাকার তোজাম্মেল হক বলেন, ৬’শ বস্তা কাটিনাল জাতের আলু রেখেছিলাম। এবছর আমার ৬’শ বস্তা আলুতে লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হবে। তারা আরো বলেন, “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ”।

অপরদিকে মৌসুম শুরুতে আলু রোপণের জন্য বীজ আলু সংরক্ষণে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন হাট-বাজার ও বীজ আলু বিক্রেতাদের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন আলু চাষীরা। এতে দেখা দিয়েছে বীজ আলুর তীব্র সংকট। বীজ আলুর চাহিদা বাড়ায়, বীজ আলুর সংকট দেখিয়ে বেশি দামে কৃষকের কাছে বীজ আলু বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে বীজ আলু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। বীজের গুনগত মান ভালো ও ফলন ভালো হওয়ায় ব্র্যাকের বীজ আলুর চাহিদা বেড়েছে আলু চাষাবাদে। বাজারে ব্র্যাকের বীজ আলুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরী করে ব্র্যাকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা বীজ আলুতে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ কৃষকের। 

পাঁচবিবি উপজেলার সোনাকুল গ্রামের কৃষক রতন মন্ডল, কুসুম্বা গ্রামের বকুল মিয়া, ঢাকারপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলামসহ একাধিক কৃষক জানান, কয়েক দিনে আগেও ব্র্যাকের বীজ আলু প্রকারভেদে ১৬শ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় আশপাশের বাজারগুলোতে কৌশলে ১৮শ থেকে ২০০ হাজার টাকায় বীজ আলু বিক্রি করেছে বিক্রেতারা। দাম বেশি হলেও ফলন ভালোর আশায় এই বীজ আলু কিনছেন কৃষকেরা।  

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বীজ আলু বিক্রেতারা বলছেন, নির্ধারিত মূল্যে বীজ আলু বিক্রি করছেন তারা। কৃষকের থেকে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছেনা। তবে বাজারে বীজ আলুর সংকট আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বীজ আলু সংরক্ষ করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫২ 

ব্র্যাক সীড অ্যান্ড অ্যাগো এন্টারপ্রাইজের জয়পুরহাট টেরিটরি অফিসার মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, ব্র্যাকের বীজ আলুর কোন দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। তবে কৃষকের চাহিদার তুলানায় বীজ দিতে পারছিনা। গতবছর জয়পুরহাট জেলায় ৪৭শ মেঃ টঃ বীজ আলু বিতরণ করা হলেও এবছর ৫২শ মেঃ টঃ বীজ আলু বিতরন করা হয়েছে তবুও কৃষকের চাহিদা শেষ হচ্ছেনা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, এ উপজেলাটি আলু চাষের জন্য খুব উর্বর এজন্য প্রতি বছর ফলনও ভালো হয়। গত বছর উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ করেছিল।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে