প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:৩৬

বগুড়ায় আলু চাষে ব্যস্ত চাষিরা ফলন হবে ১২ লাখ মেট্রিক টন

এইচ আলিম
বগুড়ায় আলু চাষে ব্যস্ত চাষিরা 
ফলন হবে ১২ লাখ মেট্রিক টন

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টিপাত না হলে বগুড়ার বাজারে আগামজাতের নুতন আলু দেখা যেতো। বৃষ্টিপাতের কারণে আগাম চাষ করা ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে এবার আগাম আলু বাজারে আসতে দেরি হচ্ছে। শীতের প্রায় সবজি বাজারে দেখা গেলেও আলু দেখা যায়নি। চলতি বছর জেলায় সাড়ে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর ফলন ধরা হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর শেষ পর্যন্ত আলুর ফলন পাওয়া যায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আলু চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আলুর ফলন ভালো পাওয়া গেলেও দাম নিয়ে শঙ্কিত। এদিকে বগুড়ার মাঠে মাঠে চাষিরা আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।

আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবছর আলু বীজের সংকট নেই। দামও রয়েছে স্বাভাবিক। তবে সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। ফলে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে গড়ে তা’ ৮ থেকে ১২ হাজারে দাঁড়াবে। আগাম বাদ দিয়ে পুর্ণ মেয়াদে ৬০ থেকে ৭০ দিনে এই আলু তুললে বিঘা প্রতি সর্ব্বোচ ৮০ মন আলু পাওয়া যাবে। কোন কোন জমিতে আবার ৭০ মন আলু পাওয়া যেতে পারে। 
বগুড়ার সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ বন্দর এলাকার আলু চাষি খোকন হোসেন জানান, খোলা বাজারে এখনো আলুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। পাইকাইর বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি। বাজারে এখনো আলুর দাম কম। নতুন আলু চাষের পর বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে একই দাম থাকলে খুব বেশি আয় করা যাবে না। চাষের পর ভালো আলু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি অফিসার ফরিদ হোসেন জানান, বগুড়ায় ১৯ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টেবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিতে আগাম চাষের ক্ষেতের আলু পানিতে ডুবে যায়। বৃষ্টির কারনে আগাম আলু উঠতে দেরি হচ্ছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। এই আলু আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে উঠবে। নতুন আলু দিয়েই নবান্ন অনুষ্ঠান হবে। বাংলা দিনপঞ্জি হিসেবে আগামী ১৬ নভেম্বর হবে নবান্ননুষ্ঠান। জেলায় এখনও ৮৪ হাজার মেট্রিকটন আলু মজুদ আছে। মৌসুমের শুরতে নবান্নকে ঘিরে আলু কৃষকরা আগাম আলু চাষ করে থাকে। নতুন আলু বাজারে উঠলে হিমাগারের পুরাতন আলুর কদর থাকেনা। তাই অধিক লোকসান ঠেকাতে হিমাগারের আলু তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দেয়। 
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা জানান, আগামজাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায় বলে আগাম জাতের আলু চাষ কলা হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবর মাসে বৃষ্টিপাতের কারণে আলুর ক্ষেত কিছু নষ্ট হয়েছে। সে কারণে আগামজাতের আলুর ফলন কমে যাবে। তবে মুল আলু চাষের আবহাওয়া এখন পর্যন্ত ভালো আছে। আমন ধান টাকার পর পুরোপুরি ভাবে আলু চাষ শুরু হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, জেলায় এবার ৫৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ছাড়িয়ে গিয়ে উৎপাদন হয়ে থাকে। গত বছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও সেখানে শেষ পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে ১২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হবে। এখন পর্যন্ত চাষি পর্যায়ে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হবে। বগুড়া ও তার আশপাশের জেলায় যে পরিমান আলু উৎপাদন হয়ে থাকে তা বিদেশের বাজারে দিতে পারলে একটি আলুও অবিক্রীত থাকবে না এবং সেই সঙ্গে বগুড়ার চাষিরা আলুর দামও পাবে ভালো। 
চার জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়ার আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বগুড়ায় ৫৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের বিপরীতে ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন, জয়পুরহাটে ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের বিপরীতে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন, পাবনায় ৯৭০ হেক্টর জমির বিপরীতে ১৬ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন এবং সিরাজগঞ্জে ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টরে আবাদের বিপরীতে ৪৯ হাজার ৯০৯ মেট্রিক টন আলুর ফলন পাওয়ার আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে