প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:১৮

বগুড়ার আকাশে বিমান উড়াতে প্রতিনিধি দলের বিমানবন্দর পরিদর্শন

এইচ আলিম
বগুড়ার আকাশে বিমান উড়াতে 
প্রতিনিধি দলের বিমানবন্দর পরিদর্শন

প্রায় ২০ বছর পর বগুড়ার বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বগুড়াবাসির মধ্যে নতুন করে উন্নয়নের স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে। ২০০০ সালে নির্মাণ হওয়ার পরেও আজ অবদি বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচল শুরু হয়নি। বগুড়াবাসির বিভিন্ন সময়ে দাবীর মুখে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সোমবার বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পরিদর্শন করেন।  

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর প্রতিনিধি দলে প্রধান ছিলেন উপ সচীব ইশারাত জাহান পান্না। এছাড়া ছিলেন, উপ পরিচালক (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) মো: মাসুদ রনা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো: আমিনুল হাসিব, সহ পরিচালক (সিএনএস) প্রশান্ত কুমার সাহা, সিনিয়র ড্রাফটম্যান কবির হোসেন। 
বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, বগুড়ায় বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি দল সোমবার পরিদর্শন করেন। বিমানবন্দরের প্রাথমিক বিষয়গুলো তারা পরিদর্শন করবেন।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর প্রতিনিধি দলের প্রধান উপ সচীব ইশারাত জাহান পান্না জানান, প্রাথমিকভাবে পরিদর্শন করা হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দরে কি কি আছে সেটায় নোট করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের জন্য আরো জমি প্রয়োজন হবে। আর বাকি বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ বলবেন।
জানা যায়, বগুড়ায় বিমান বন্দর নির্মাণ কাজ শুরুর ২০ বছরেও পূর্নতা পায়নি। ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া নামকস্থানে বগুড়া ষ্টল বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। সেই সময় বগুড়া সদরের এরুলিয়া মৌজায় ১০৯ দশমিক ৮১ একর ভূমি হুকুম দকল করে কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৯৯৫ সালে জমি কিনতে ব্যয় ধরা হয় ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ছিল ৫ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬শ’ ফুট প্রস্থ রানওয়ে নির্মাণ, অফিস ভবন নির্মাণ, মূল গ্রাউন্ডনির্মাণ, কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আশা করা হয়। সে হিসেবে ২০০১ সালের শুরুতে বগুড়ার আকাশে বিমান উড়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমান আর উড়েনি। বগুড়াবাসির বহু আশার বিমানবন্দর আর চালুও হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে লোকসনের আশংকায় সরকারীভাবে বিমান সার্ভিস চালু করা হয়নি। সম্প্রতি বগুড়া বিমানবন্দর চালুর দাবী জোরালো হলে বাংলাদশ বিমানবাহিনী সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এরপর এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট দেয়া হয় সরকারকে। ওই রিপোর্টে কি বলা হয়েছে তা না জানা গেলেও বগুড়াবাসি বগুড়ার বিমান বন্দরটি পূর্নাঙ্গভাবে চালুর দাবী জানিয়েছে। পরে বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চালু করা হয়। বর্তমানে বগুড়ার এই বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
বগুড়া জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহন শাখা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া বিমান বন্দরের বর্তমান রানওয়ের সাথে আরো ৩ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য রানওয়ে নির্মাণ, তেলের রিজার্ভার নির্মাণ, যাত্রী ও মালামাল হ্যান্ডলিং সহ অন্যান্য সুবিধার জন্য আরো প্রায় একশত একর জমি দরকার।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, বগুড়া থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিমান চালু করা হলে বগুড়ার উন্নয়ন আগের থেকে বেড়ে যাবে। বগুড়ার পর্যটন এলাকাগুলোতে আগের থেকে আরো দিগুণ পর্যটক আসবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে দাবী জানানো হয়েছে। 
বগুড়া চেম্বার অব কর্মার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সহ সভাপতি মাফুজুল ইসলাম রাজ জানান, বগুড়ার মানুষের জন্য নতুন খবর হলো জেলা থেকে এবার বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যে প্রতিনিধি দল আসছেন তারা বগুড়ার উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করবেন বলে মনে করি। বগুড়া চেম্বার থেকে কয়েকবার জানানো হয়েছে বগুড়ার বিমানবন্দরটি চালু করার। বিমানবন্দর চালু হলে দেশে বিদেশের ক্রেতা ও ব্যবসায়িরা বগুড়ায় উৎপাদিত মালামাল সহজে দেখে কেনাবেচা করতে পারবেন। ব্যবসা বাণিজ্যের আরো প্রসার হবে। বিমানবন্দরটি চালু হলে বগুড়া সহ আশপাশের জেলাগুলোতেও আরো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে