প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২১ ২২:২৪

শেরপুরে কৃষি প্রেক্ষাপট প্রশ্নবিদ্ধ

শুভ কুন্ডু, শেরপুর((বগুড়া)প্রতিনিধিঃ
শেরপুরে কৃষি প্রেক্ষাপট প্রশ্নবিদ্ধ

সার ডিলারদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন, পান বিড়ি সিগারেটের মতো যত্র তত্র সার বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন, চাহিদা অনুযায়ী সরকারি বরাদ্দ পাবার পরেও সারের কৃত্রিম সংকট নিয়ে প্রশ্ন, প্রান্তিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান এবং ডিলারদের অবস্থান ও বাজার নজরদারির বিষয়ে কৃষি অফিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, এমন একাধিক প্রশ্নে প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কৃষি প্রেক্ষাপট।
সারা দেশে আলু চাহিদার একটি বড়ো অংশ পূরণ হয় শেরপুর উপজেলায় উৎপাদনকৃত আলু দিয়ে। এখানকার উৎপাদিত আলু সারা দেশের সবজির বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে সারের কৃত্রিম সংকট ও রসিদ বিহীন অধিক দামে সার ক্রয় করে উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়া শেরপুরের কৃষকেরা আলু উৎপাদেনে দিন দিন উৎসাহ হারাচ্ছে। শেরপুরে গতবছরের তুলনায় এ বছর আলু উৎপাদন তুলনা মূলক হারে কমবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে আলুর বীজ বপন সম্পন্ন হলে উৎপাদন হারের সম্পুর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে কৃষি অফিস বলছে।
সরেজমিনে শেরপুরের কুসুম্বী ইউনিয়নে বিপাকগ্রস্ত কিছু আলু উৎপাদনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা মাঠ প্রস্তুত করে সারের অপেক্ষায় বসে আছেন। বিভিন্ন দিক ছোটাছুটি করেও সার সংগ্রহ করতে পারছেন না। এমনকি তাদের ইউনিয়নে কোনো সারের ডিলার বা সাব ডিলার নিয়োজিত আছেন কিনা বা কোথায় আছেন তাও জানেন না তারা। তারা সাধারনত আশপাশের খুচরা সার বিক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক দামে সার সংগ্রহ করে থাকেন। যেখানে প্রতিটি ইউনিয়নের নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে সার বিতরণের জন্য সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলার ও সাব-ডিলার নিযুক্ত করেছেন। সেখানে কৃষকরা তাদের সংশ্লিষ্ট ডিলারের কাছে পৌছাঁতেই পারেন না। এমন তথ্য জানিয়েছেন বেলঘরিয়া এলাকার মো: আলমগীর, মো: খয়বর মন্ডল, আব্দুর রউফ, আব্দুল আলীম সহ একাধিক কৃষি উদ্যোক্তা। তারা বলেন, স্থানীয় চৌমহুনী বাজার, বেলঘরিয়া বাজার ও আশপাশের খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ৮৫০ টাকা, এমওপি ১১৭০ টাকা, টিএসপি ১৩০০ টাকা, ডিএপি ৯০০ টাকা দরে কিনছেন। সরকারি রেটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলছেন আমরা কৃষক মানুষ, সরকারি বেসরকারি রেট আমরা জানিনা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ২৮০০ হেক্টর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  ১২ জন বিসিআইসি, ২০ জন বিএডিসি অনুমোদিত এবং উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগকৃত ১০টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় মোট ২৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। এসব বিক্রেতার খুচরা পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ মূল্য বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ৮০০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকা, ডিএপি ৮০০ টাকা ও এমওপি ৭৫০ টাকা রাখার কথা। তবে ডিলারদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ইউরিয়া ৮৩০ টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ৮৩০ টাকা ও এমওপি ৯৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন। এর পরে তারা ২০ টাকা লাভে সার বিক্রি করছেন কৃষকদের কাছে। এমনটাই জানালেন, একাধিক খুচরা বিক্রেতারা।

শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলছেন, সম্প্রতি নির্দিষ্ট বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সার বিক্রি ও সারের বাজার নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে ডিলারদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে এবং স্ব স্ব ইউনিয়নের নির্দিষ্ট স্থান থেকে সার বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের ডিলার পর্যায়ে সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি রেটের চেয়ে বেশি দাম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করছি। আর অতিরিক্ত দাম রাখার ব্যাপারে প্রমাণ মিললে ডিলার বাতিল সহ কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মইনুল ইসলাম চাঁদনী বাজারকে বলেন, সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু বিষয়ে উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটিকে সাথে নিয়ে আমরা একটি আলোচনা করেছি। এই আলোচনায় সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি ইউনিয়নের ডিলাররা স্ব-স্ব ইউনিয়নের সুবিধাজনক স্থানে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করবেন, ডিলাররা সময়মতো তাদের সার উত্তোলন করবেন এবং চালানের মাধ্যমে সরকারি দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করবেন। এর অন্যথা হলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে