প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২১ ২২:৫৮

ভাতার পাশাপাশি স্তরভেদে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি বগুড়ার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর

সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডে ইতিবাচক স্বপ্ন দেখছে প্রতিবন্ধীরা
সঞ্জু রায়:
ভাতার পাশাপাশি স্তরভেদে কর্মসংস্থান
সৃষ্টির দাবি বগুড়ার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বগুড়ায় নানাভাবে সুফল পাচ্ছে এই গোষ্ঠীর প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশী সদস্য। প্রতিবন্ধী ভাতা, শিক্ষা-উপবৃত্তি কার্যক্রম, বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা প্রদান, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী ঋণসহ নানা সুবিধায় ইতিবাচক স্বপ্ন দেখছে এই জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ সদস্যরা। এখন শুধু প্রতিবন্ধীদের স্তরভেদে সৃজনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জোর দাবি জানিয়েছেন তারা তাহলে দেশের উন্নয়নে এই গোষ্ঠীও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

বগুড়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বগুড়া জেলায় জরিপের মাধ্যমে শনাক্তকৃত ৫২ হাজার ৫৯ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবর্ণ নাগরিকের কার্ড প্রদান করা হয়েছে যাদের মাঝে ৩৯ হাজার ৮’শ ১৭ জনকে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা মাসিক ৭৫০ টাকা হারে এই অর্থবছরে সর্বমোট ৩৫ কোটি ৮৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা এবং ২ হাজার ৩’শ ৬৫ জনকে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা উপবৃত্তি হিসেবে এ জেলায় প্রাথমিক স্তরে মাসিক ৭৫০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার ৩’শ টাকা সর্বমোট এই অর্থবছরে ২ কোটি ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার ৮’শ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শতভাগ ভাতা কর্মসূচীর আওতায় আনার লক্ষ্যে অবশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করার কাজও এখনো চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয় বগুড়ায় সমাজসেবা কার্যালয়ের আওতায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম যেখানে আবাসিক শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন থেরাপী প্রদান, বরাদ্দ থাকা সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী হুইল চেয়ার, সাদাছড়ি বিতরণ চলমান কার্যক্রম, বগুড়ার শিবগঞ্জ আলিয়ারহাটে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে আবাসিক সকল সুবিধাসহ কারিগরি নানা প্রশিক্ষণ যেমন: ড্রাইভিং, দর্জি, কম্পিউটার ইত্যাদি যেখান থেকে ইতিমধ্যেই কয়েক শতাধিক ব্যক্তি প্রশিক্ষিত হয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রদান করা হচ্ছে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা যেখানে এই অর্থবছরেই বগুড়াতে প্রায় ২ হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ২ কোটি ২৬ লক্ষ ১১ হাজার ৬’শ ৮৮ টাকা যেখানে ঋণ আদায়ের পরিমাণ ৮০ শতাংশ। শুধু তাই নয় বিনা সুদে ঋণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে গিয়েছে ঋণগ্রহীতা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
সরকারের নানামুখী এসব ইতিবাচক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে উপকারভোগী একজন কথা বলতে না পারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ইসমাইল হোসেন (ছদ্মনাম) কাগজে লিখে জাানান, তিনি প্রতিমাসে যে টাকা ভাতা পায় সেটি তার অনেক উপকার হয় শুধু তাই নয় সমাজসেবা অফিস থেকে তিনি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেশকিছু আয়বর্ধনমূলক কাজও করছেন যাতে তিনি ভালভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু ইসমাইল নয় কথা হয়েছিল চিত্রাঙ্কণ শিল্পী মূক-বধির প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তির সাথে তিনিও এখন স্বপ্ন দেখেন দেশসেরা চিত্রকার হওয়ার এজন্যে তিনি শুধু সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতা কামনা করেছেন। এমন হাজারো স্বপ্নের কথা শুনতে পারা যায় বগুড়ার হাজারো সম্ভাবনাময় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে যাদের ভাতার পাশাপাশি এখন শুধু প্রয়োজন সৃজনশীল কর্মসংস্থানের।
দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ডাব্লিউডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টির সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিবন্ধীরা এ সমাজের বোঝা নয় তাদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুললে তারাও দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন মুক্তা পানির কোম্পানীসহ অসংখ্য উৎপাদনমুখী কারখানায় প্রতিবন্ধীরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তেমনি এলাকাভিত্তিক তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের শতভাগ ভাতা কার্ডের আওতায় নিয়ে এসেছে এবং নিশ্চিত করার প্রয়াস করে যাচ্ছেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকল সুযোগ-সুবিধা। ইতিমধ্যেই দেশব্যাপী প্রতিবন্ধীবান্ধব ও সাধারণ জনগণের সুবিধাজনক অফিস নির্মাণ হচ্ছে যেখানে সরাসরি তারা আরও সাবলীলভাবে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের দক্ষ করতে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার যেটির পরিধি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। 

  দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে