বগুড়ায় আমন ধান কাটা শেষের পথে ফলন পাওয়া যাবে ৫ লাখ মেট্রিক টন
_.jpg)
গত বছর করোনা ভাইরাস ও বন্যার সাথে লড়াই করে আমন চাষ করেছিল চাষিরা। আর এবছর বন্যা না থাকায় করোনা ও খড়ার সাথে লড়াই করে আমন চাষ শেষ করে ঘরে ফলন তুলেছে। বগুড়ার মাঠে মাঠে ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। ধান কাটা শেষ হতে চললেও ধানের দাম নিয়ে সন্তুষ্টুৃ নয় আমন চাষিরা। বগুড়া হাট বাজারে আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০৬০ টাকা মন। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আমনের ভালো ফলনের সঙ্গে জেলায় এবার প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আকারে ফলন পাওয়া যাবে।
জানা যায়, চলতি বছর বগুড়ার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও শেষ পর্যন্ত বন্যা দেখা দেয়নি। যমুনা নদীর নিচু অঞ্চলগুলোতে কিছু পানি দেখা গেলেও বগুড়ার বেশিরভাগ এলাকায় তেমন কোন বন্যার পানি দেখা যায়নি। বর্ষা ও শ্রাবণের বৃষ্টিতে নির্ভর করেই আমন চাষিরা এবার মাঠে নেমে আমন চাষ শেষ করে। বৃষ্টিপাত কম হলে বেশিরভাগ এলাকায় শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরী করে আমন চাষ করেছিল। চলতি বছর বগুড়ায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেশি হলেও আমন চাষিরা মাঠের কাজে ছিল সচল। সচল থাকায় সময়মত ধান কেটে হাটে বাজারে বিক্রিও শুরু করেছে। চলতি বাজারে মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা মন আর চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ১০৩০ থেকে ১৬০ টাকা মন। আবার সরকারীভাবেও ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে। সরকারীভাবে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। জেলায় ৯ হাজার ৮শ ৭০ মে: টন আমন ধান সংগ্রহ করা হবে।
আমন চাষিরা বলছেন আমনের ফলন বগুড়ায় বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ১৮ মন পাওয়া যায়। জমি চাষ ও কাটা মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো: এনামুল হক বলেন, কৃষিতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করা হচ্ছে। সরকারের প্রনোদনা কর্মসুচি কৃষকদের কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে। এতে করে চাষীরা আমন ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষি প্রধান এলাকা। ধান, পাট, সবজি, মরিচ, ভুট্টা, আলু, সরিষার জন্য বগুড়া কৃষি ক্ষেত্রে বরাবরই অবদান রাখছে। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে জমি চাষের পর মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৬২০ হেক্টর হয়েছে। কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এ বছর ২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ বেশি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফলন ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। কিন্তু জমি বেড়ে যাওয়ার কারণে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের পর মোট ফলন পাওয়া যায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন চলতি বছরও ফলন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, গত বছর বন্যার সাথে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ছিল। এবছর বন্যা নেই। করোনা ভাইরাস ছিল। তারপরও চাষিরা আমন চাষ করেছে সময়মত। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলণ পাওয়া গিয়েছিল। এবছরও ভালো ফলন পাওয়া গেছে। চলতি বছর চাষের জমিও বেড়েছে ২ হাজার হেক্টরের বেশি। সে কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার চাল আকারে ফলন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, জেলার অধিকাংশ উপজেলায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। হাটে বাজারে ধান কেনাবেচা শুরু হয়েছে আরো বেশ কয়েকদিন আগে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন