প্রকাশিত : ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:৪৫

ভাঙলো সরকার-গড়ছে ইজারদার!

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি:
ভাঙলো সরকার-গড়ছে ইজারদার!

দেশের হাট-বাজারগুলো স্থানীয় দোকানীদের দখলে। প্রায় সব হাট-বাজারে দোকানিরা স্থায়ী ইমারত বা স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিবছর সরকারি ডাকে অংশ নিয়ে ইজারাদার হাট-বাজারগুলোর টোল আদায় করে। আবার নতুন নতুন দোকানিদের জায়গা বরাদ্দ দিয়ে ফাঁকা জায়গা দখলের পাশাপাশি গলিগুলোও সরু করে ফেলে। এক পর্যায়ে হাট-বাজারে ঢোকার পরিবেশ থাকে না। প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে প্রান্তিক চাষীরা ভোক্তাদের পরিবর্তে দালালদের কাছে কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এভাবেই এক পর্যায়ে ইজারাদাররা সরকারের পরম বন্ধু সাজে। আবেদন করে হাট-বাজারে গড়ে ওঠা দোকানগুলো ভেঙ্গে ফাঁকা করে সরকারি সেড নির্মাণের। তদবির আর উৎকোচে কর্তৃপক্ষ হাট-বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায়। ফলে হাট-বাজারে স্থায়ী ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে।
এদিকে অবৈধ ঘর উচ্ছেদ শেষে ইজারাদার এবার অবৈধভাবে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে দোকানীদের উৎসাহিত করে হাতিয়ে নেয় অর্থ। একসময় আবারও ঘিঞ্জি পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা গাইবান্ধা জেলাজুড়ে।
সম্প্রতি জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একাধিক হাট-বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পাকা-আধাপাকা-কাঁচা দোকানঘরগুলো। পরবর্তীতে সেখানে হয়নি কোন সরকারি সেড। একসনা বরাদ্দে ডিসিআর কাটারও ব্যবস্থা করা হয়নি। ভেঙ্গেই ক্লান্ত কর্তৃপক্ষ; ঝিমিয়ে পড়েছে। সে অবধি ফাঁকা স্থানে বসতি দোকানে চলত ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা। কিন্তু হাট-বাজারের উন্নয়ন না হওয়ায় ফাঁকা আর থাকছে না।
কর্তৃপক্ষ ঘুমালেও উপজেলার একাধিক হাট-বাজারে দোকানঘর নির্মাণ করছে ইজারাদার ও দোকানীরা। ইতিমধ্যে দরবস্ত ইউনিয়নের চরকতলা হাট-বাজারটি স্থায়ী নির্মাণে ভরে গেছে। দোকান নির্মাণ বন্ধ নেই  চাঁদপাড়া ও জামালপুর হাট-বাজারেও।
ইজারদারদের কৌশলে গড়ার কাজ চলমান রয়েছে তালুককানুপুর ইউনিয়নের জামালপুর হাট-বাজারে। পাশের ছবিতে দোকানিদের স্থায়ী পাকা ঘর নির্মাণের চিত্র ধারণ করা হয়েছে ৩ ডিসেম্বর ২০২১ শুক্রবার সকালে। 
এ উপজেলায় গত ১১ মার্চ (১৪৪৩ বঙ্গাব্দ)  উপজেলার হাট-বাজার ইজারায় ইজারাদাররা হাট-বাজারের দখল নেন। এর প্রায় সাড়ে ৮ মাস পার হলেও হাট-বাজার উন্নয়নে কোন সেড নির্মাণ বা একসনা বন্দোবস্ত চূড়ান্ত হয়নি। এক অভিযোগে জানা যায়, তালুককানুপুর ইউনিয়নের জামালপুর হাট-বাজারে একসনা মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রাপ্তির আগেই অবৈধভাবে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে দোকানিরা। এদের মধ্যে নোদাপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে সাদেকুল ইসলাম বিপ্লব, একই এলাকার মসিউর রহমান ইসমাইল, আশরাফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, নূর আলম, আল আমিন, ফরিদুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, আবু হানিফ, আজাহার আলী, আ. হাই, মিজানুর রহমান বাবলু।
অপরদিকে এই হাট-বাজারের বন্দোবস্ত প্রাপ্ত ব্যক্তি সাদেকুল ইসলাম বিপ্লব নিজেই ইটের ঘর তৈরী করেছেন। তিনি পূর্বের আবেদনকৃত ৫৭ দোকানির মধ্যে কাটছাট করে নতুন করে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। সামনে সারির ঘরের জন্য ৩০ হাজার; পিছনে ২০ হাজার ও অন্যদের ৮ থেকে ১০ হাজার করে উৎকোচ নিয়ে  প্রায় ৪৮ জনকে ঘর তৈরীর অনুমতি দিচ্ছেন। 
এমন  অভিযোগ তুলেছেন দোকান বরাদ্দ না পাওয়া আগের ব্যবসায়ী বকুল মিয়া, মেহেদুল, মশিউর ও আব্দুল হামিদ প্রমুখরা। এদিকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তি বিপ্লব জানান, দোকানিরা নিজেরাই ডিসি অফিসের আবেদন সাপেক্ষে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছেন। দোকানিরা জানান, ডিসি অফিসে আবেদন করেই ঘর করছি। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন- তাহলে পূর্বের স্থাপনা উচ্ছেদের প্রয়োজন ছিল কী? অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আবারও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষকে। প্রয়োজন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে