স্রোতের বিপরীতে ভোট বাস্তবতা, রাহেলা-লোকমান-রহিমদের ভাবনা

সারাদেশে উঠেছে ভোটের জোয়ার। সৎ, যোগ্য, জনদরদি, গরীবের বন্ধু, কালোটাকার মালিক নয়, নয় সন্ত্রাসী বা মাদকাসক্ত; এমন বিশেষণে বিশেষায়িত ব্যক্তিকে ভোট দিতে সবাই চায়। প্রকৃতপক্ষে চলমান স্রোতের বিপরীতে ভোট বাস্তবতা বড়ই অসামঞ্জস্য। মুখে নীতিবাক্য আওড়ালেও ভোটারদের মন পাষাণ ও বড়ই কঠিন।
উন্নয়ণের স্বার্থে-নিজ স্বার্থে কিন্তু ভোটের দিন শেষে নির্বাচিত ব্যক্তিটি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী; নয়তো সন্ত্রাস-মাদক-জুয়ারপ্রশ্রয়দাতা এবং নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো ব্যক্তিরই জয় হয়। বলছি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য পদে মাইক প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ভিক্ষুক নি:সন্তান বিধবা রাহেলা বেওয়ার কথা, বলছি গোবিন্দগঞ্জের দরবস্ত ইউনিয়নের লাঙ্গল মার্কার নমিনী এম এ রহিম ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘোড়া মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী পেশায় ঘটক লোকমানের কথা।
এঁদের টাকা নেই, নেই পারিবারিক-সামাজিক-রাজনৈতিক-পেশিশক্তির প্রভাব। সমাজের প্রান্তিক স্তরের জীবনঘেঁষা সুখ, দু:খ, দারিদ্রতা উপলব্ধি করা এ প্রার্থীরা মানবতার বেদনাময় অধ্যায়ের অবসানে প্রার্থী হয়েছে।
এঁরা হয়তো নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে না। হারাতে পারে জামানত। তবুও; চেয়ারম্যান পদে হিজড়া নির্বাচিত হলেও এঁরা কী পারবে- এমন প্রশ্ন ভোটারদের কাছে? তবুও বলতে চাই- যারা গরীবের একটি ভাতা কার্ডের বিপরীতে টাকা নেয়, সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে, গ্রাম্য শালিসে ঘুস নেয়, গরীব-অসহায়দের প্রাপ্যতার বদলে পীড়া দেয় তাদেরকে ভোট না দিয়ে রাহেলা-রহিম-লোকমানরা কী স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারে না।
ভিক্ষুক রাহেলা বেওয়া:
বিধবা হয়েছেন দুই দশক আগে। জীবন সংগ্রামে বয়সের ভারে ভিক্ষাবৃত্তিতে ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতে তার আনাগোনা সব প্রার্থীর থেকে বেশি। প্রতিটি পরিবারের হাড়ির খবর রাখেন রাহেলা বেগম। ভিখের পাশাপাশি ওয়াদা নিয়েছেন প্রতিটি নারী ভোটারদের। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন- ভোটে দাঁড়াও, ভোট দেব। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে তাদের সেই আশ্বাসের প্রতিদান যাচাইয়ে আজ রাহেলা তাদের ভোটের আশায় পায়ে হেঁটে পথ চলছেন। সামান্য কিছু পোস্টার ঝুলিয়ে মৌখিকভাবে হলেও রাহেলা জনগণকে অর্থাৎ ইউনিয়নবাসীকে উন্নয়নের নানা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ঘটক লোকমান:
অস্বচ্ছল জীবনে দুই সংসার আর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পথচলা লোকমান সাধারণ জনতার ভোগান্তির অবসান চান। ফুলবাড়ী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পুরো উপজেলায় হাজার হাজার সংসার নিজ হাতে গড়িয়েছেন। অসামর্থ হলেও সামান্য কিছু পোস্টার বের করে লাগিয়েছেন ইউনিয়নজুড়ে। দিন-রাত সমান তালে ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এম.এ রহিম:
একজন সহজ-সরল ব্যক্তি; একটি পত্রিকার ব্যুরো চীপ পরিচয়ে পরিচিত এম.এ রহিম। অত্যন্ত বিশ্বাস প্রবণ এই ব্যক্তি উপহাস করা মানুষের মিথ্যা আশ্বাসগুলোকে বিশ্বাস করে আজ একটি পোস্টার ছাড়াও ভোটের মাঠে একাকীই প্রচারণা চালিয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন সাংবাদিক এম.এ রহিম। পারিবারিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার না করে নিজ ব্যক্তিত্ব ও অর্থ ব্যয়হীন ভোটের মাঠে এমএ রহিমের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ‘অর্থ ছাড়া ভোট দিন, ন্যায্য অধিকার বুঝে নিন।’ তিনি চান নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিদের জয়। কোনো অর্থ ব্যয় না করে নির্বাচন করতে সকলকে উৎসাহিত করতেই কেবল তিনি আগামী ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গরীব, অসহায়, দুস্থদের জন প্রতিনিধিত্বে রাহেলা-লোকমান-রহিমদের জয় সমাজের প্রচলিত ভাবধারার মূলে হানা দিক, মিথ্যা আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিদাতারা নিপাত যাক, এটাই হোক সবার চাওয়া।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন