বগুড়ায় বাবা-ছেলের ভুয়া ডাক্তারের চেম্বারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান

প্রতিদিন সকাল থেকেই ছোট থেকে বড় সকল বয়সের রোগীর ভিড় থাকে বগুড়া শহরের নিশিন্ধারা কারবালার আলম মেডিকেল ষ্টোরে। যেখানে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত শহীদুল ইসলাম দিয়ে থাকতেন সর্বরোগের চিকিৎসা যার মাঝে শিশু ও নারীদের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা, হাতভাঙ্গা চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সময় করতেন অপারেশন ও সার্জারি যা চলছে বিগত দীর্ঘ বছর ধরে এবং এসবের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন শহীদুলের বাবা মো: আব্দুল কাদের। শুধু তাই নয় ডাক্তার হিসেবে তারা এতটাই নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে রীতিমতো সর্বরোগের চিকিৎসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে আলম মেডিকেল ষ্টোর যেখানে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও দেয়া হতো বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ওষুধ। শুধু তাই নয় শিশুদের তাৎক্ষণিক এই দুই ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক ওষুধ গুঁড়ো করে খাওয়ানো হতো চেম্বারেই। প্রথমে বাবা এবং বাবার বয়স হয়ে যাওয়ায় এই চেম্বারের বর্তমানে হাল ধরেছেন ছেলে শহীদুল ইসলাম। কি ভাবছেন অনেক স্বনামধণ্য ডাক্তার তাহলে ভুল ভাবছেন! ডাক্তারি ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে শুধুমাত্র মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স করে এতদিন এলাকার সাধারণ মানুষদের সাথে ডাক্তারির নামে প্রতারণা করে আসছিলেন বাবা ও ছেলে।
অবশেষে মঙ্গলবার বাবা ও ছেলের এই ভুয়া ডাক্তারির রাজত্বে আকষ্মিক অভিযান চালিয়ে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে বগুড়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ৩ ঘন্টার এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান ও পাপিয়া সুলতানা। অভিযানে সহযোগিতায় ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ ও এপিবিএন এর সদস্যরা।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অনেক অনুমোদনহীন ও স্যাম্পল ঔষধ জব্দ করণসহ ভুয়া ডাক্তার হিসেবে ধরা পরা শহীদুল ইসলাম কে ঔষধ আইন ১৯৪০ এর ১৮(গ) ধারা লঙ্ঘন করার অপরাধে ২৭ ধারায় ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের জেল দেয়া হয়। একই সাথে ভবিষ্যতে এ ধরণের প্রতারণা না করার মূলে বাবা ও ছেলে উভয়ের থেকে নেয়া হয় লিখিত মুচলেকা।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান করে তারাও হতবাক হয়েছেন ডাক্তারির নামে প্রতারণা করা তাদের কর্মকান্ড দেখে। ভুয়া ডাক্তারি সার্টিফিকেট শুধু নয় ভুয়া নাগরিক সনদও রেখেছেন তারা যেখানে স্থানভেদে তারা ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করতেন। অভিযানের শুরুতে বাবা ও ছেলে নিজেদের পরিচয় পর্যন্ত অস্বীকার করেন যা সত্যিই হতবাকের। অভিযানে লোকাল এনেস্থিসিয়া সহ অপারেশন এর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাওয়া যায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অযৌক্তিক ঔষধ দেয়াসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে অভিযানে অর্থদন্ড প্রদানসহ অভিযুক্তদের লিখিত মুচলেকা নেয়া হয়েছে। এ ধরণের অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে পরবর্তীতে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটি সিলগালাসহ তাদের আরো কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে মর্মে জানান এই কর্মকর্তা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন