গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত

করোনা সংক্রমনের মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হলো বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। চার’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই দুরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। কয়েক একর ব্যক্তি মালিকানা জমিতে অনুষ্ঠিত হলো এ মেলা। সকাল থেকেই মেলাতে মানুষের সমাগম ঘটতে শুরু করে। বেলা বারার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় উপচে পড়া ভীর জমে। এদিকে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালেহ্উদ্দিন আহম্মেদ মেলাতে এসে ব্যবসায়ীদের ১ঘন্টার মধ্যে দোকান উঠিয়ে নিতে এবং দর্শনার্থীদের মেলা ত্যাগ করার জন্য হ্যান্ড মাইকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এ মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। এ সময় গাবতলীর ইউএনও মোছাঃ রওনক জাহান ও এসিল্যান্ড মিজানুর রহমানসহ বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালেহ্উদ্দিন আহম্মেদের নির্দেশনা কেউ কর্ণপাত করেনি। আয়োজক কমিটি তাদের মতো করেই মেলা পরিচালনা করেছে। এ মেলার প্রথম আকর্ষণ হলো বাঘাইড় মাছ। তবে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় মেলায় কেউ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা করেনি। এ জন্য এবার মাছের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মনে আনন্দ ছিল অনেকটাই কম। মেলায় ছিল দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ। মেলার সবচেয়ে বড় মাছ ছিল ২৪কেজি ওজনের নদীর কাতলা। যার মূল্য ছিল কেজি প্রতি ১৭’শ টাকা। চিতল ১৪’শ টাকা কেজি দরে, নদীর বোয়াল ১৬’শ টাকা কেজি, গুজি ১৪’শ টাকা কেজি, বড় রুই কেজি প্রতি ১২’শ টাকা, ব্লাডকাপ ৭’শ টাকা কেজি এবং বড় সিলভারকার্প কেজি প্রতি সাড়ে ৫’শ টাকা। এছাড়াও সামদ্রিক মাছের মধ্যে কোড়াল মাছ সাড়ে ৮’শ টাকা কেজি, গাংচিল সাড়ে ৫’শ টাকা কেজি এবং কাকলে সাড়ে ৫’শ থেকে ৮’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মেলায় দ্বিতীয় আকর্ষণ ছিল মহিষাবান গ্রামের আব্দুল লতিফ মৎস্য আকৃতির ১৫কেজি ওজনের মিষ্টি। যার মূল্য ছিল ৫হাজার টাকা। তার দোকানে প্রায় ৩শত মন মিষ্টিসহ অন্যান্য দোকানে শতশত মন মিষ্টি ও জিলাপি বিক্রি করা হয়েছে। মাছ ও মিষ্টির পাশাপাশি মেলায় বিপুল পরিমান গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও কাঠ বা ষ্টীলের যাবতীয় ফার্ণিচার, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিক্স সামগ্রী, বড়ই (কুল), আচার, কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের মতোই বিক্রি হয়েছে। তাছাড়াও বিনোদন মূলক সার্কাস, নাগরদোলা, নৌকার দোলনা, জাদু খেলা, মোটর সাইকেল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন পোড়াদহ নামকস্থানে প্রায় চারশত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি হয়ে থাকে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে উপজেলার দুর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, সুবোধ বাজার, দাঁড়াইল বাজারসহ আরো কয়েকটিস্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়েছিল। পোড়াদহ মেলা প্রসঙ্গে ইউএনও মোছাঃ রওনক জাহান ও মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে মেলাটি আগেভাগেই শেষ করতে বলা হয়েছে। মেলাটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে প্রতিবছরের মতো আজ গাবতলীর মহিষাবান গ্রামে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্দ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা। এ মেলায় শুধু মেয়েরাই ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন