প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০০:০৪

বগুড়ায় স্মার্ট প্রি-প্রেমেন্ট মিটার নিয়ে গোলকধাঁধায় অনেক গ্রাহক

সঞ্জু রায়, স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ায় স্মার্ট প্রি-প্রেমেন্ট মিটার
নিয়ে গোলকধাঁধায় অনেক গ্রাহক

‘ভাই আগে হামার বাড়ি আর দোকানের যা বিল আসিচ্ছিলো সেডা কুমা এখন ম্যালা বেশি আসে’ আগে মাসে বিল দিচ্চিলাম ৮’শ টাকা আর এখন ম্যালা টাকা তোলা লাগে প্রিপেইড মিটারে’ আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্চে এই মিটারের হিসাব’ এমনভাবেই প্রি-পেইড মিটার নিয়ে মন্তব্য করছিলেন আতাউর রহমান নামের বগুড়ার এক সাধারণ গ্রাহক। আবার রুমন নামের এক ব্যক্তি বলছিলেন, তার অফিসে কিছুদিন আগেই একটি প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিয়েছে নেসকো বগুড়া। কিন্তু তার অভিযোগ তিনি অফিসে থাকেই না বা কোন বিদ্যুৎও ব্যবহার করে না তাও তার ক্রেডিট কমে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। আবার প্রতিমাসে ৪০ টাকা করে মিটার ভাড়া সেটা কি আজীবন দেওয়া লাগবে তাও জানিনা। তাই সবকিছু নিয়ে বেশ না জানার অন্ধকারেই আছেন তারা। বগুড়ার আরেকজন  গ্রাহক জানালেন, আগে ইচ্ছামতো বিল আসতো মিটার রিডারদের কারণে। কোন মাসে হাজার আবার কোন মাসে দেড় হাজার। এখন প্রি-পেইড মিটার লাগানোর ফলে যা ব্যবহার করছি সেই বিলটাই আসছে। তবে চার থেকে পাঁচশ টাকার উপরে নয়। তবে মিটারের রিচার্জ করতে গিয়ে কমবেশী ভোগান্তি হচ্ছে। প্রিপেইড মিটার নিয়ে এমনি অসংখ্য মানুষের রয়েছে প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসা যাতে বগুড়ার সাধারণ গ্রাহকেরা এক কথায় রয়েছে গোলকধাঁধায়। আবার বগুড়ায় প্রিপেইড মিটার ইতিমধ্যেই যাদের বাসা কিংবা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে লাগানো হয়েছে সেখানে সিংহভাগ ইতিবাচক সুবিধার মাঝে কিছুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভোল্টেজ কম বা বেশী নিয়ে সমস্যা, ত্রুটিযুক্ত মিটারের কারণে ফাস্ট রিডিং, টাকা রিচার্জে সমস্যার সম্মুখীন হওয়াসহ নানা ভোগান্তি।  

তবে নেসকো বগুড়ার দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছে প্রধানমন্ত্রীর ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মাঝে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন এটি অন্যতম প্রকল্প। তাই এক্ষেত্রে সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তির কোন সুযোগ নেই। যেকোন সমস্যায় তারা আন্তরিক সেবা দিতে প্রস্তুত।
নেসকোর উক্ত প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আগের মিটারের ক্ষেত্রে যে টাকা ডিমান্ড চার্জ নেওয়া হতো এখন প্রিপেইড মিটারেও সেটিই নেয়া হচ্ছে কিন্তু অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে মাসিক ৪০ টাকা মিটার ভাড়া। তবে আগে সরকারি ভ্যাট ৫% ছিলো কিন্তু প্রিপেইড মিটারে নিট বিদ্যুৎ বিলের ওপর  ১% (এক শতাংশ) হারে রেয়াত সুবিধা পাচ্ছে গ্রাহকেরা। তিনি জানান, প্রতিটি গ্রাহক নুন্যতম ২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ পায় বর্তমানে যা আগেও ছিল। সেক্ষেত্রে আবাসিক এর জন্যে প্রতি কিলোওয়াট ৩০ টাকা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্যে ৬০ টাকা যা অপরিবর্তিত রয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গিয়ে নেসকো বগুড়ার উক্ত প্রকল্পের একাধিক কর্মকতার্র কাছে প্রিপেইড মিটার নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সেখানে জানা যায়, সাধারণ গ্রাহকদের অনেকে নিজেদের অজানা থেকে এই মিটার সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়নি তাই তাদের কাছে বিষয়টি জটিল মনে হচ্ছে। প্রকৃতঅর্থে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ ও গ্রাহকের সাশ্রয়ে এই স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরকারের একটি ইতিবাচক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এই মিটারে গড় বিল, অনাকাঙ্খিত কম/বেশী বিল হবার কোন সুযোগ নেই। আবার ম্যানুয়ালি রিডিং গ্রহণের প্রয়োজন না থাকায় ভুলবশত ওভার/আন্ডার বিলিং হবেনা। একইসাথে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার সুযোগ না থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না এই মিটারে। তবে নেসকো এইবার এই স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারে রেখেছে গ্রাহকদের জন্যে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা যা সম্পর্কেও এখনো গ্রাহকদের অনেকেই স্পষ্ট হয়নি। এ প্রসঙ্গে উক্ত প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনে কোন টাকা গ্রাহকদের থেকে নেয়া হয়না এবং শুরুতে ২’শ টাকা রিচার্জ করে দেয়া হয়। যা গ্রাহকেরা পরবতীর্তে রিচার্জ করলে যে পরিমাণ টাকা খরচ করবে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়া হবে। তবে মাসে একবার ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া সরকার কতৃর্ক নিধার্রিত ৪০ টাকা এবং ভ্যাট কেটে নেয়া হবে। এছাড়াও মিটারে টাকা না থাকলেও জরুরী পরিস্থিতিতে ৯৯৯৯৯ টাইপ করে সিঙ্গেল ফেজে ২’শ টাকা এবং থ্রি ফেজে ৫’শ টাকা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স নিতে পারবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় সুবিধা হচ্ছে গ্রাহকদের সুবিধার্থে প্রতিদিন বিকেল ৪ টা থেকে পরের দিন সকাল ১১টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটিসহ সকল সকল সরকারি ছুটির দিন মিটারে ব্যালেন্স শেষ হলেও ক্রেডিট এ বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল থাকবে যা ফ্রেন্ডলি আওয়ার হিসেবে বলছে নেসকো বগুড়া। এখন কোন গ্রাহকের মিটারে টাকা এবং ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সও যদি নাও থাকে তারপরেও তারা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হবেনা তবে তাদের পরবর্তী রিচার্জ থেকে ফ্রেন্ডলি আওয়ারে খরচকৃত টাকা কেটে নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্প নেসকোর সহকারী প্রকৌশলী জি.এম মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বগুড়ায় নেসকোর প্রায় দেড় লক্ষ গ্রাহকের মাঝে মাঠ পর্যায়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ পর্যন্ত ৪টি ডিভিশনে এক লক্ষের বেশী স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই স্থাপনের বাকী কাজও সম্পন্ন করার প্রত্যাশা রয়েছে। তিনি জানান, আন্তজার্তিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে এই মিটার স্থাপন করা হয়েছে যেখানে অযথা টাকা কাটা কিংবা কমবেশী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে ইলেক্টনিক মেশিন তাই ভুলত্রুটি হতেই পারে সেক্ষেত্রে নেসকো থেকে প্যারালাল মিটার স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন অনুসারে মিটার পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও মাসিক ৪০ টাকা মিটার ভাড়া কতদিন দিতে হবে এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘একটি মিটারের যে দাম মাসিক ৪০ টাকা করে দিলে তা শোধ হতেও অনেক বছর লাগবে’ তবে যেহেতু ইলেক্টনিক মিটার তা নষ্ট হলে নেসকো কিন্তু পুনরায় বিনামূল্যে তা পরিবর্তন করে দিবে বলে জানান তিনি। তবে নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এই টাকা নেয়া হবে যা সরকার নির্ধারিত। মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার যেহেতু সম্পূর্ণ নতুন একটি উদ্যোগ তাই এটি নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসা বা ধোঁয়াসা থাকতেই পারে তবে তারা সর্বদা হটলাইন নম্বরসহ ডিভিশন অনুযায়ী গ্রাহকের যেকোন প্রয়োজনে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে মিটার স্থাপনের সময়েও প্রচারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য সকলের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকর্মীদেরও আহ্বান জানান নেসকোর এই কর্মকর্তা।            

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে