বগুড়ায় ভুয়া তান্ত্রিকদের প্রতারণামূলক পোস্টারের ফাঁদে পড়ছে অনেকেই

কথায় নয় কাজ, ১২ ঘন্টার মধ্যে ফলাফল সাথে বিফলে মূল্য ফেরত এমন নানা আকর্ষণীয় কথায় বগুড়া শহরের আনাচে কানাচে হাজার হাজার প্রতারণামূলক পোস্টার সাঁটিয়েছে ভুয়া তান্ত্রিক সাজা একটি চক্র। কে বা কারা শহরজুড়ে এই পোস্টার লাগায় তা জানেনা কেউ তবে দিনশেষে এমন প্রতারণার ফাঁদে নিজেদের অজান্তেই পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ। তবে প্রতারক চক্রের এমন ফাঁদে ভুল করেও পা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ মানুষদের সচেতন থাকার কথা বলেছেন জেলা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো এই পোস্টারগুলোতে দেখা যায় তান্ত্রিকদের নাম ও মোবাইল নম্বর আলাদা আলাদা হলেও পোস্টারে থাকা কথাগুলো প্রায় একই। আর যাতে বোঝাই যায় এটি একটি নির্দিষ্ট চক্রের মাধ্যমেই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যেখানে প্রচার করা হচ্ছে, বি.এ মঘা রাঙ্গামাটি ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আবার কোনটাতে লেখা হচ্ছে কামরুপ কামাক্ষা, নাগাল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টিপরা থেকে আগত তান্ত্রিক জগতের শিরোমণি ইত্যাদি নানা কাল্পনিক বিশেষণে তারা সকল অসাধ্য সাধন করে দেন। যাদের মাঝে বিয়ে বন্ধ, নি:সন্তান থেকে সন্তান লাভ, বিদেশে অশান্তি, ছেলে-মেয়ের অমিল, জ্বিন-ভূতের আছর, শত্রু, দুশমন দমন করা, সংসারে অশান্তি, মানসিক কষ্ট দূর করা, ব্যবসা বানিজ্যে বাঁধা, পড়াশোনায় অমনোযোগী এবং বান-টোনা নষ্ট ইত্যাদি নানা কাজ অন্যতম। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে তারা মোবাইলের মাধ্যমে দেশ-বিদেশেও তদবির করে যা সত্যিই মনে হয় আকাশ কুসুম চিন্তাভাবনা। আর এসব তান্ত্রিকদের ঠিকানার স্থানে বেশিরভাগই দেয়া থাকে চট্টগ্রাম, শুভলং রাঙ্গামাটি কিংবা বান্দরবানের কোন স্থানের নাম যা আসলে সম্পূর্ণ মিথ্যা এমনই ধারণা সচেতন সমাজের সকলের। তবে বগুড়া শহরে সবচেয়ে বেশি যে দুটো পোস্টার চোখে পড়ে তা হলো তান্ত্রিক মো: বেলাল বৈদ্য বন কবিরাজ এবং তান্ত্রিক কৃষ্ণা রানী মগের যার নাম ও মোবাইল নম্বর আলাদা হলেও প্রচারণার লেখা একই। জ্ঞান-বিজ্ঞানে যখন সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন এখনো এসব ভুয়া তান্ত্রিকদের পোস্টার, কুফরি-কালামের নামে ধর্মকে অবমাননা সাথে প্রচারণার সকল মাধ্যম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষদের ফাঁদে ফেলার অপচেষ্টা তা সত্যিই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত রবিবার সন্ধ্যায় শহরের সাতমাথায় এমনই এক পোস্টারের সামনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিক্সাচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন সে এভাবে পোস্টারের দিকে তাকিয়ে আছে? অনেকক্ষণ কাচুমাচু করে সে জানান, সে পারিবারিক নানা অশান্তিতে আছে ২/৩ দিন আগে পোস্টারে থাকা নম্বরে সে কল দিয়েছিল তখন সেই কথিত তান্ত্রিক তাকে বলেছিল তার উপর কুফরি করা আছে। তাই তার অশান্তি লেগেই থাকে আর সাথে আয় রোজগার হয়না। সে যদি সেই তান্ত্রিকদের কথা শোনে তাহলে সে সকল অশান্তি থেকে মুক্তি পাবে এবং খুব দ্রুত সে বড়লোক হয়ে যাবে। আর এ জন্যে জ্বীনের মাধ্যমে তদবির করাতে হবে যেখানে তাকে জ্বীনকে খুশি করতে দুটি মোরগ, মোমবাতি, গোলাপ জল আরও নানা সামগ্রী কিনে দিতে হবে তাই তাৎক্ষণিক বিকাশে যদি সে ১৬৫০/- টাকা পাঠায় তাহলে ১২ ঘন্টার মধ্যে সে ফল পেতে শুরু করবে। প্রতারকদের নানা মধু মেশানো এমন কথার ফাঁদে সেই গরীব রিক্সাচালক তার কিস্তির টাকাসহ মোট ১৬৫০/- টাকা তাদের বিকাশে প্রেরণ করে কিন্তু টাকা পাঠানোর পর আর তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি সেই রিক্সাচালক। তাই অবাক দৃষ্টিতে সেই পোস্টারের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি আর কল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শুধু এই রিক্সাচালক নয় এমন অসংখ্য মানুষ শহরের আনাচে কানাচে থেকে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিন্তু মানসম্মানের ভয়ে পরবর্তীতে কাউকে আর কিছুই বলতে পারেনা তারা।
তবে কে বা কারা দিনে-রাতে কখন এই প্রতারণামূলক পোস্টার দেয়ালে সাঁটাচ্ছে তা সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে না পারলেও শহরের অনেকেই বলেছে বেদেনীদের একটি গ্রুপ দলবেঁধে এই পোস্টারগুলো লাগায় যাদের বাঁধা দিলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা।
বগুড়ার সচেতন সমাজের পক্ষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, প্রতারণামূলক এমন চক্রের পোস্টার শুধু দেয়ালে নয় টাকার বিনিময়ে এই চক্র তাদের প্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন ক্যাবল টিভিতেও সেটিও বন্ধ করা উচিত। টাকার কাছে কখনোই নিজেদের মনুষ্যত্ব বিক্রি করা উচিত নয়। একই সাথে তিনি প্রশাসনের দায়িত্বশীল মহলের প্রতিও এই চক্রকে গ্রেফতারের অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র শরাফত ইসলাম জানান, শুধু বগুড়া নয় সারাদেশব্যাপী প্রতারণার এমন হাজারো ফাঁদ পেতে রেখেছে অনেক চক্র যাদের বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। তবে এই চক্রকে প্রতিহত করতে হবে সাধারণ মানুষের সচেতনতার মাধ্যমে। তিনি ভুল করেও এমন প্রতারণার ফাঁদে সাধারণ মানুষদের পা না দেয়ার আহ্বান জানান জেলা পুলিশের পক্ষে। একই সাথে যদি কেউ ইতিমধ্যেই প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে তাহলে দ্রুততম সময়ে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলেন জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন