প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২২ ২২:৫১

মহাস্থানে হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহ:) এর মাজার শরীফে বার্ষিক ওরশ মোবারক ভক্তবৃন্দদের ব্যাপক সমাগনের সম্ভাবনা নিরাপত্তা জোরদার

সোহেল আক্তার মিঠু
মহাস্থানে হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহ:) এর মাজার শরীফে বার্ষিক
ওরশ মোবারক ভক্তবৃন্দদের ব্যাপক সমাগনের সম্ভাবনা নিরাপত্তা জোরদার

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঢাকা রংপুর মহাসড়কের পশ্চিমপাশের্^ টিলার উপর আড়াইি হাজার বছরের ঘুমন্ত প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর রাজধানী ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়। এই মহাস্থান গড়ে অবস্থিত পুন্ড্র নগরীর শাসক পশুর রাম তার শাসন আমলে একক আধিপত্য বিস্তার করে ইসলাম বিদ্রোষী রাষ্ট্র কায়েম করে এক পর্যায়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। কথিত আছে সেই সময় বোরহান উদ্দিন নামে এক মুসলিম নি:সন্তান ছিলেন। আল্লাহপাকের রহমতে পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করলে গরু আকিকা প্রদান করলে শাসক পশুর রাম ক্ষিপ্ত হয়ে সহ পরিবারে তাদেরকে হত্যা করে। এর দীর্ঘদিন পর মধ্যপ্রাচ্যের বলখ শহর থেকে স্বপনে আল্লাহর নির্দেশনায় হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহ:) সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিতে মাছের পিঠে ছোয়ার করে এবং বাঘের পিঠে বসে মহাস্থান  আগমন করেন। পশুর রাম রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করে নামাজের জায়গা চেয়ে নেন। এর পর তার জায়গা প্রসার করতে থাকে। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে পশুর রাম রাজা তাকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন। একপর্যায়ে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন সেই যুদ্ধে পশুর রাম এর সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে এবং তার বোন শীলাদেবীকে তাড়া করেন সে সময় কথিত আছে শীলাদেবী দৌড়িয়ে পালিয়ে করতোয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহননের মত ঘটনা প্রমাণ পাওয়া গেছে। পশুর রাম পরাজিত হলে এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ইসলাম প্রচারের একপর্যায়ে হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহ:) মাহী সাওয়ার মহাস্থান তার হাতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশের্^ সমাধিত হয়। সেই থেকে বাংলা খ্রিষ্টাব্দের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এই মহামানবের বাৎসরিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বিগত দুই বৎসর বৈশিখ মহামারী করোনার প্রকোপ থাকায় সরকারি বিধি নিষেধের কারণে বাৎসরিক ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত করতে পারেনি আয়োজক কমিটি। চলতি বৎসরে বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ আশংকা জনক ভাবে হ্রাস পাওয়ায় সরকারি বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ায় এ বছর বাৎসরিক ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওরশ উপলক্ষে মাজারে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেলায় নাগর দোলা, চড়কি সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর পড়শা বসিয়ে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপুর পরিমান বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী বেচাকেনা করে থাকে। ওরশ ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে প্রায় ১শত থেকে দেড় শত বৎসরের ঐতিহ্য বাহী খাবার ঘি ও ডালডায় ভাজা কটকটি (খোরমা জাতীয় শুকনা খাবার) ব্যাপক হারে বিক্রয় হয়ে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন, লাল মিয়া, হামন মিয়া জানান- ওরসের মেলা উপলক্ষে প্রায় এক কোটি টাকার কটকটি বিক্রি হয়ে থাকে। মাজার কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কয়েক লক্ষাধিক ভক্ত, আশেক, ধর্ম প্রাণ মুসলমান ও সাধু, সন্যাসীদের আগমন ঘটে থাকে। ইতি মধ্যে জেলা প্রশাসন ও শিবগঞ্জ থানা প্রশাসন শান্তি প্রিয় ও সুশৃংখল ভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। ইতি মধ্যে আইন শৃংখলা রক্ষার্থে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু বলেন, আগত ভক্তবৃন্দের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করবেন না। এই ওরসকে কেন্দ্র করে কোনরকম মাদক দ্রব্য, সেবন ও বিক্রয় করতে দেওয়া হবে না। এব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার তানভীর হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা সহ প্রায় ৫শত ৪২ জন পুলিশ সদস্য ও আনছার, ভিডিবি, গ্রাম পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। কোন আইন বিরোধী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সভাপতি বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, বাৎসরিক ওরশ উপলক্ষে আগত ভক্তবৃন্দের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে এলাকায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।  

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে