প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২২ ০১:৪৪

বগুড়ায় বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি এখন স্কুলকলেজ পড়ুয়া কিশোর গ্যাংয়ের দখলে

অভিভাবক ও প্রশাসনের নজরদারি নেই
সঞ্জু রায়ঃ
বগুড়ায় বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি এখন
স্কুলকলেজ পড়ুয়া কিশোর গ্যাংয়ের দখলে

বগুড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলিতে হঠাৎ বেড়েছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর গ্যাং এর উৎপাত। যারা স্কুল চলাকালীন সময়ে অথবা স্কুল শেষে দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সড়কের মাথায় কিংবা চায়ের দোকান কে ঘিরে বসায় রমরমা আড্ডা। সাথে চলে একের পর এক সিগারেট আর মুখে তাদের সকলের অকথ্য ভাষায় গালাগালি। শুধু তাই নয় মা-বাবার অবাধ্য এসব স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নিজেদের অজান্তেই ফ্যান্টাসি থেকে জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাদকের সাথে এবং সড়কে চলাচলকারী ছাত্রীদের করছে ইভটিজিং যাতে করে সচেতন অভিভাবকরা তাদের মেয়ে সন্তানকে একা স্কুল কিংবা কোচিং এ পাঠাতেও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরেছে। এদিকে তরুণ প্রজন্মের জন্যে সুস্থ বিনোদন কেন্দ্রের অভাব এবং পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকাকেও এই নেতিবাচক চিত্রের নেপথ্যের কারণ হিসেবে দেখছে অনেকেই। তবে অভিভাবকদের কঠোর নজরদারি এবং প্রশাসনের তৎপরতার মাধ্যমে এই চিত্র না পাল্টালে ভবিষ্যতের জন্য এটি খারাপ বার্তা হিসেবেই দেখছে সুধীজনরা। 

বিগত ২/৩ দিন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা ও এর আশেপাশের এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্রতিদিন স্কুলচলাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন দলে দলে স্কুলের পোষাক পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে ধুমপান করছে এবং উচ্চস্বরে নিজেদের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে যাদের একটি সিংহভাগ অংশ হচ্ছে বগুড়া জিলা স্কুলের ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গ্রুপ, প্রিক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এসব গ্রুপের মাঝে আবার রয়েছে তাদের দলনেতা যার নেতৃত্বেই চলছে মেয়েদের ইভটিজিং কিংবা প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাউকে মাঠের কোনায় ডেকে এনে হুমকি দেয়া অথবা শাসানো। কয়েকদিন টানা পর্যবেক্ষনে দেখা যায় এসব শিক্ষার্থীরা সর্বদা একটি চক্র হয়েই আড্ডা দেয় এবং তারা কোন না কেন রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় রয়েছে। তাই তাদের কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদেরকেই অপমান করে এই গ্যাং এর সদস্যরা। আবার  ছেলেদের পাশাপাশি অনেক মেয়েদেরও দেখা যায় কাঁধে পড়ার ব্যাগ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিচ্ছে এই মাঠের কোন এক কোনায়। পর্যবেক্ষণের একদিন চোখে পড়ে এই মাঠেই স্কুলপড়ুয়া কিছু মেয়ে শিক্ষার্থীরা র‌্যাগ ডে পালন শেষে এসে প্রকাশ্যেই মদপান করছে। এ হয়তো তাদের ফ্যান্টাসি কিন্তু এই লজ্জা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের দায়ভার কে নেবে? এইরকম চিত্র দেখা যায় শহরের পৌর পার্কেও। প্রাইভেট ও কোচিং এর নাম করে প্রায়ই মেয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকটু এসব চলাফেরা এখন হরহামেশাই দেখা যায় বগুড়া শহরে। এছাড়াও বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার জেলখানার মোড়, নজরুল চত্ত্বর ও লাবাম্বা মোড়ে গড়ে উঠা কয়েকটি অস্থায়ী দোকানকে ঘিরেও প্রতিদিন সড়ক অবরুদ্ধ করে চলে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের হাতেই থাকে সিগারেট আর অধিকাংশ কিশোরই চালায় মডিফাই করা মোটরসাইকেল। যাদের যানবাহনের উচ্চগতি ও শব্দে এই সড়কগুলো দিয়ে বিকেল করে চলাফেরাই মুশকিল হয়ে পরেছে সাধারণ মানুষদের।
জলেশ্বরীতলায় প্রতিদিন নিজের মেয়েকে প্রাইভেটে নিয়ে আসা আব্দুল জব্বার নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে আগে একাই প্রাইভেট পড়তে আসতো কিন্তু মাঝে কিছু বখাটে ছেলে তার মেয়েকে বিরক্ত করা শুরু করেছিল। তাই ব্যস্ততা থাকলেও তাকে প্রতিদিন আসতে হয় মেয়েকে রাখতে এবং বাসায় নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, জলেশ্বরীতলার সড়কগুলো দিয়ে হাঁটতে হয় মাথা নিচু করে কারণ স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষার্থীরা যখন প্রকাশ্যে ধুমপান আর সাথে অকথ্য ভাষায় নিজেদের মাঝে কথা বলে তা সত্যিই নিজ চোখে দেখা বা কানে শোনা লজ্জার এবং কষ্টের।
এ প্রসঙ্গে জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডোনিস বাবু তালুকদার বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বগুড়া শহরে বিশেষ করে জলেশ্বরীতলা কেন্দ্রীক বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, আলতাফুন্নেছা মাঠ ও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পোষাক পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অবাধ আড্ডার চিত্র তাদের নজরে এসেছে। এই নেতিবাচক পরিবেশের কারণে উক্ত এলাকার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তবে তারা সমিতির পক্ষে প্রতিটি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে স্কুলচলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের বসতে না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং মনিটরিং কার্যক্রম করছে। তবে স্কুল ও প্রাইভেট এর নাম করে বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে এই আড্ডা বন্ধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর মনিটরিং কার্যক্রমের অনুরোধ জানান তিনি।
সার্বিক প্রসঙ্গে মুঠোফোনে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ার এই স্বর্ণালী মূহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে তার পরিবারকে। মা-বাবা কে খেয়াল রাখতে হবে তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে বা কি করছে? পারিবারিক মনিটরিং এর মাধ্যমে সন্তানদের সুপথে চলার জন্যে সর্বদা অনুপ্রাণিত করতে হবে। তবে জেলা প্রশাসক হিসেবে তার করণীয় হিসেবে তিনি বলেন, স্কুল সময়ে শহরে অপ্রাপ্তবয়স্কদের অযথা আড্ডা বন্ধে তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবেন এবং একই সাথে প্রতিটি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও তিনি কঠোর মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেন তিনি। 
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর এবং সব মহলেরই ভিতরে নানা ধরনের শংকা দেখা দিয়েছে। তিনি আজ থেকেই বগুড়া শহরের প্রতিটি সড়ক এবং অলিগলিতে এই কিশোর গ্যাং যাতে অপরাধ করতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা জেলা পুলিশের পক্ষে নেওয়া হবে মর্মে জানান।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে