প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০২২ ২৩:৪৬

গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ অনিয়ম ও দায়বদ্ধতা কতটুকু

ষ্টাফ রিপোর্টার
গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ
অনিয়ম ও দায়বদ্ধতা কতটুকু

৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ;

 বহুতল ভবন নির্মাণ ব্যায় প্রায় ২৪ কোটি;
 নির্মাণ এলাকায় সু-উচ্চ নিচ্ছিদ্র বাউণ্ডারি;
 প্রেস মিডিয়া কর্মীদের প্রবেশে কড়াকড়ি;
 কাজ তদারকির দায়িত্ববানদের নিয়েও নানা প্রশ্ন।

স্টাফ রিপোর্টার : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহুতল ভবন নির্মাণে বেজ ও গ্রেড বিম ঢালাই শেষে পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রেড বিম ঢালাইয়ের অভিযোগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একাধিক প্রেস মিডিয়া কর্মী সেখান উপস্থিত হয়। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা দেখভালে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। কিছু শ্রমিক মধ্যরাতের পরও ঢালাই কাজ চলমান থাকার কথা ক্যামেরার সামনে স্বীকার করায় নিরাপত্তা কর্মী ও জনৈক ব্যক্তি মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্ঠা করে। পরে জনৈক ব্যক্তি ক্যামেরাবন্দী না হওয়ার চেষ্টায় সটকে পড়ে। এসময় দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টায় মিডিয়া কর্মীরা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থা লাইভ প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। কাউকে না পেলেও মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি সকালে বিষয়টি জানার চেষ্টা করবেন বলে জানান। এমন সব ঘটনা ঘটেছে গত রবিবার (৫ জুন) দিবাগত রাত ১টার পর। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানববন্ধন কর্মসূচি (শনিবার, ১১ জুন) আহবান করা হলে হলেও অদৃশ্য কারণে শনিবার তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এমন ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ বাসী সহ সচেতন মহলের মধ্যে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা হতে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি), রংপুর বিভাগ। যার প্যাকেজ নং-ডাব্লিউপি-১৩৫০৫/এসডিপি-৪(জিওবি)-এইচইডি’র কার্যাদেশ নং- ৩৭/১(২৮)। ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা ৬৪৫ পয়সার কার্যাদেশ মূল্যে কাজটি ১৮ মাসের মধ্যে সম্পন্নের লক্ষে গত ২৪ মার্চ ২০২১ সালে শুরু হয়। প্রকল্পটি এসটি-এমআরকে(জেভি) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করছে। 
গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে নিরাপত্তা প্রাচীর থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজকে লোকচক্ষুর আড়াল করতে সর্বোচ্চ দৈর্ঘের টিনের নিচ্ছিদ্র প্রাচীর দিয়ে রেখেছে। গেটের বাহিরে রাখা হয়েছে নিরাপত্তা কর্মী। যিনি দিনের বেলায় কেউ ভেতরের কাজকর্ম দেখতে বা উপস্থিত দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলেও নানা অজুহাতে তাদের ঢুকতে দেন না। এমনকি ভিতরে কর্তারা থাকলেও তিনি অস্বীকার করেন। এমন কাণ্ডে অনেকেই সেখানকার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রশ্ন তুলেছে প্রকল্পে অনিয়ম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাদের দায়বদ্ধতা নিয়েও।  
তাদের প্রশ্ন- কাজ চলাকালীন সময়ে তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি কি সেখানে উপস্থিত? কাজে নিম্নমানের রড-বাঁশ, ইট-খোয়া, বালি নাকি সঠিক মানের উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে? সর্বোপরি সচেতন মহলের প্রশ্ন ‘যদি দেখ-ভালের কর্তা সেখানে উপস্থিত না থাকে তা হলে গ্রেড বীম ঢালাই কাজ কীভাবে মধ্যরাত পর্যন্ত চলল।’ তারা কর্তৃপক্ষের কাছে ওই রাতে ঢালাই কাজের প্রকাশ্য ব্যাখ্যার দাবি রাখেন। যা এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি। 
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মুঠোফোনে তিনি গভীররাতে ঢালাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, প্রকল্প কাজে নিম্ন মানের কোনো উপকরণ ব্যবহার বা অনিয়ম হয়নি।
অপরদিকে সহকারী প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মামুন রেজার সাথে সরাসরি কথা হলে তিনি জানান, গভীর রাত নয় সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহুতল ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তারা জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সঠিক সময়ের মধ্যে কোনো অনিয়মের আশ্রয় না নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন এমটাই আশা করছে সচেতন নাগরিক সমাজ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে