প্রকাশিত : ৮ আগস্ট, ২০২২ ২২:১৪

ধুনটে পানি স্বল্পতায় পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক, ফলন ভালো হলেও ব্যায় নিয়ে দুশ্চিন্তায়

ধুনট বগুড়া প্রতিনিধি
ধুনটে পানি স্বল্পতায় পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক, 
ফলন ভালো হলেও ব্যায় নিয়ে দুশ্চিন্তায়

বর্ষাকালেও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে মধ্যে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিপাত হলেও তা প্রখর রৌদ্রে বৃষ্টির পানি আবারো শুকিয়ে যায়। বর্ষার ভরা মৌসুমেও নদী-নালা, খাল-বিলে এখন হাঁটু পানি। তাই পানি স্বল্পতায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার পাট চাষিরা। 

অনেকে বাড়ির উঠনে বা জমিতেই গর্ত করে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি জমিয়ে সেখানে পাট গাছ জাগ দিয়ে রাখছেন। তবে স্বল্প পানিতে পাট গাছ জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশের গুনগত মান কম হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকেরা। 

ধুনট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কিন্তু পাট গাছ পরিপক্ক হলেও নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যপ্ত পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছে চাষিরা।

গতকাল চৌকিবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আফসার আলী নামে এক কৃষক তার ২ বিঘা জমির পাট গাছ কেটে নিয়ে তা জমির এক পাশে গর্ত করে সামান্য বৃষ্টির পানি জমিয়ে সেখানে পাট জাগ দিচ্ছেন।

কৃষক আফসার আলী বলেন, এখন বর্ষার ভরা মৌসুম হলেও বৃষ্টির কোন দেখা নেই। তাই জমির পাশে গর্ত কওে সেচ দিয়ে ও জমানো বৃষ্টির পানিতে পাট গাছ জাগ দিচ্ছেন। তবে অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় আঁশের গুনগত মানও কমে যাবে। এছাড়া এবছর শ্রমিকের মজুরীও অনেক বেশি। তাই ফলন ভালো হলেও তেমন লাভের মুখ দেখবে না কৃষকেরা। 

একই গ্রামের পাট চাষি আলাউদ্দিন জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি নেই। তাই পাট কাটার পর কিভাবে এখন জাগ দিবো। তাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামের পাট চাষি আকিমুদ্দিন জানায়, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়ির আশপাশের খাল-বিল ও পুকুর-ডোবায় পানি নেই। তাই অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের বাঙ্গালী নদীতে পাটগাছ জাগ দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানেই পাটের আঁশ ছাড়িয়ে আবার শ্রমিক দিয়ে ফলন ঘরে তুলবেন। এতে তার উৎপাদন ব্যায়ও বেড়ে যাবে।

ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদুল করিম জানান, নদী বিধৌত এলাকা হওয়ায় এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নেই পাট চাষের উপযোগি। তন্মধ্যে নিমগাছী, মথুরাপুর, গোপালনগর ও চৌকিবাড়ী ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। 

নিমগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনিতা নাসরিন বলেন, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা বেশি থাকায় এই ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর অনাবৃষ্টির কারনে এসব জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই পাট চাষিরা অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন।

ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে দেশী, তোষা ও মেসতা জাতের পাট চাষ হয়েছে। ভলনও অনেক ভালো হয়েছে। তবে অনেক এলাকায় পানির জন্য কৃষকরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় থাকলেও তাদেরকে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ার পারামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে পাটের গুনগত মানও অনেক ভালো হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন তিনি জানান। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে