প্রকাশিত : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৪৬

বগুড়ায় জেলা পুলিশের অভিযানে ২ মাসে ৭ মণ গাঁজা উদ্ধার: গ্রেফতার ২৪৭ জন

সঞ্জু রায়:
বগুড়ায় জেলা পুলিশের অভিযানে ২ মাসে
৭ মণ গাঁজা উদ্ধার: গ্রেফতার ২৪৭ জন

বগুড়া জেলা পুলিশের অভিযানে গত ২ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৭ মণ গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে যা পূর্বের যেকোন গাঁজা উদ্ধারের পরিসংখ্যানের থেকে প্রশংসনীয়। উদ্ধারকৃত গাঁজার আনুমানিক মূল্য প্রায় পৌণে ২ কোটি টাকা। 

এদিকে গত ২ মাসে জেলায় গাঁজা উদ্ধার সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১৯২ টি যেখানে আসামী করা হয় ২৬৮ জনকে যাদের মাঝে গ্রেপ্তার হয়েছে ২৪৭ জন। মূলত, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে বগুড়া জেলাকে মাদকদ্রব্য পরিবহনের ট্রানজিট জেলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় দীর্ঘসময় থেকেই। সময়ের সাথে সাথে মাদকদ্রব্য চোরাচালান চক্র তাদের রুট ও মাদক পরিবহনের কৌশল পরিবর্তন করলেও বগুড়া জেলা পুলিশ গত ২ মাসে তাদের আভিযানিক দক্ষতায় তাতে ভাটা ফেলে দিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহাসড়কে বিভিন্ন ফাঁদ পেতে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে বিগত সময়ের মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকব্যবসায়ীরাও এখন বগুড়াকে এখন তাদের মাদক পরিবহনের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতেও ভীত হয়ে আছেন যা ইতিবাচক সফলতা হিসেবেই দেখছে বগুড়া জেলা পুলিশ।


বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম এবং বগুড়া জেলা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানের প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, এই বছরের শুধু মাত্র জুলাই ও আগষ্ট মাসেই বগুড়া জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭ মণ গাঁজা উদ্ধার করেছে। কেজির হিসেবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭৬। গত জুলাই মাসে জেলা পুলিশের অভিযানে প্রায় ১১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের হয় ২৬ টি যেখানে আসামী করা হয় ৪২ জনকে ও যাদের মাঝে গ্রেপ্তার করা হয় ৪০ জনকে। এছাড়াও এজাহারনামীয় আসামীদের ধরতে করা অভিযানে আরো ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২২ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা। 
সর্বশেষ গত আগষ্ট মাসে বগুড়া জেলা পুলিশের অভিযানে ১০৭ কেজি ৪৭০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়। যেখানে শুধুমাত্র গাঁজা সংক্রান্ত ৩৪টি মামলায় আসামী করা হয় ৪৯ জনকে। যাদের মধ্যে ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এছাড়াও পূর্বের ৬৪  মামলায় এজাহারভুক্ত ৮৯ জন আসামীর মধ্যে ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় আরও ৩৬ কেজি ১০৯ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম আরো জানায়, গত ২ মাসে মাদক বিরোধী অভিযানে শুধুমাত্র গাঁজা উদ্ধারের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বগুড়াকে ট্রানজিট সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু জেলা পুলিশের দক্ষতায় তা সফল হয়নি। উল্লেখযোগ্য অভিযান হিসেবে গত ৩১শে জুলাই নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে পাথর বোঝাই ট্রাক থেকে ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়। ওই অভিযানে চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তারা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, বিপুল পরিমাণ এই মাদকদ্রব্য লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে পাবনার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। আবার সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট শিবগঞ্জে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) আশিক ইকবাল নেতৃত্বাধীন ওই অভিযানে জানা যায় উদ্ধার হওয়া ওই ৬ কেজি গাঁজা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। এছাড়াও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) প্রতিনিয়ত মাদকবিরোধী সফল অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে বগুড়ায় এবং প্রতিমাসে তাদের অভিযান ও উদ্ধার এর পরিসংখ্যান ইতিবাচক অর্জন।
বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র হিসেবে তিনি জানান, আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাঁদর ভেদ করে বগুড়া দিয়ে মাদকের চালান বহনের চেষ্টা করে কারবারীরা। এই ক্ষেত্রে গাঁজা নিয়ে যারা গ্রেপ্তার হন তাদের অধিকাংশই সরাসরি এই কারবারের সাথে জড়িত। বগুড়ার সাথে আশেপাশের অনেকগুলো জেলা সংযুক্ত তাই প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনা করে যাচ্ছে পুলিশ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সফল হচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় মাদকদ্রব্য গাঁজা কারবারে কিছুটা ভাটা পড়লেও সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারবারীরা নতুন নতুন কৌশলে সক্রিয় হয়েছে এবং সীমান্তে শতাধিক পয়েন্ট ধরে মাদক কারবারীরা গাঁজা নিয়ে আসার চেষ্টা চলমান রেখেছে। কিন্তু বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ও দূরদর্শী কৌশলে মাদক পাচারকারীদের সকল কৌশল ভেস্তে দিয়ে আভিযানিক সাফল্য অব্যাহত রাখার কথা বলেন এই কর্মকর্তা।
গাঁজা উদ্ধারে গত ২ মাসের আভিযানিক সাফল্য প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাদকের বিরুদ্ধে বগুড়া জেলা পুলিশ সর্বদা জিরো টলারেন্স ও আপোষহীন। জেলায় সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি বগুড়া জেলা পুলিশের প্রতিটি ইউনিট মাদক ও সন্ত্রাস দমনে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যার ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা, চেকপোস্ট বৃদ্ধি করাসহ মাদক উদ্ধারে পুলিশি অভিযানের কৌশলও পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে আভিযানিক সাফল্য আসছে। মাদকবিরোধী এই অভিযান বগুড়ায় আরো কঠোরভাবে পরিচালিত হবে মর্মে সময় থাকতেই মাদকের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি এই পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে