প্রকাশিত : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:১৩

দুপচাঁচিয়া অটোভ্যান চালক হারুন হত্যার রহস্য উন্মোচিত গ্রেপ্তার ২

দুপচাঁচিয়া(বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
দুপচাঁচিয়া অটোভ্যান চালক হারুন হত্যার রহস্য উন্মোচিত গ্রেপ্তার ২

দুপচাঁচিয়ায় চাঞ্চল্যকর অটোভ্যান চালক হারুন হত্যার ৫দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ। সেই সাথে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার আশুঞ্জা গ্রামের মৃত শুকুর আলী পুত্র মুক্তার হোসেন(৪০) এবং  পৌর এলাকার জয়পুরপাড়ার জিল্লুর রহমানের পালক পুত্র শাকিল(২৫)। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মুক্তার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। 
থানার প্রেস রিলিজে জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর বড়বাড়িয়া গ্রামের সাবেক বাসিন্দা এবং বর্তমানে ঘাটমাগুড়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ হারুন(৪২) একজন অটোচার্জার ভ্যানচালক। ০২ পুত্র ও ০১ কন্যার সংসারে তিনি ছিলেন এক মাত্র উপার্জনের ব্যক্তি। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও সংসারে সুখের ঘাটতি ছিল না তার। হারুন নিজ বাড়ি থেকে প্রতিদিন বিকাল বেলা ভ্যান নিয়ে বের হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া সিও অফিস মোড় থেকে আক্কেলপুর রোডে করমজি এবং বেড়াগ্রাম পর্যন্ত ভ্যান চালাত। গত ২৮ আগস্ট বিকাল অনুমান ৫টার সময় হারুন নিজ বাড়ি থেকে প্রতিদিনের ন্যায় ভ্যান নিয়ে বের হয়। একই তারিখ রাত্রী অনুমান ১০টার সময় সিও অফিস মোড়ে তার বড় ছেলে আব্দুস সবুর এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। হারুন তার ছেলেকে বলে যে করমজি গ্রামে আর এক টিপ ভাড়া চালিয়ে তারপর বাড়ি যাবে। এর কিছুক্ষন পর সিও অফিস মোড়ে উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয় তাদের আরো ০১ জন সহযোগিসহ হারুনের ভ্যানটি ঘোরাফেরা করার জন্য ২০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ ভাড়া নেয়। সিও অফিস মোড় থেকে আক্কেলপুর রোড়ে যাওয়ার পথে ডিমশহর গ্রামে যাওয়ার রাস্তার মোড়ে তাদের আরো ০১ জন সহযোগী পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঐ ভ্যানে উঠে। অতঃপর তারা ডিমশহর, জে.কে কলেজ সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪/৫ ঘন্টা ঘুরতে থাকে। একপর্যায়ে ভ্যানচালক হারুন উপজেলার কুশ্বহর গ্রামস্থ ইসলামপুর হতে করমজি গামী পাকা রাস্তার ফাঁকা জায়গায় পৌঁছিলে উপরোক্ত ব্যক্তিগন নেশা জাতীয় দ্রব্য খেয়ে মাতলামি করতে থাকলে ভ্যানচালক হারুন তাদেরকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে না চাওয়ায় তারা তাদের হাতে থাকা ধারালো চাকু দ্বারা তাকে ভয় দেখায়। এরপর তাদের একজন ভ্যানচালক হারুনের মাথা ধরে ভ্যান থেকে নিচে নামায়, অপর একজন হাতে থাকা ধারালো চাকু দ্বারা উপর্যুপুরি কোপাতে থাকে। উক্ত ব্যক্তিগন ভ্যানচালক হারুনের পরিচিত হওয়ায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার পায়ের রগ কেটে তার ভ্যান নিয়ে  ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধস্তাধস্তির সময় ভ্যানটি উক্ত স্থানের ধানের জমিতে পড়ে গিয়ে ব্যাটারির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভ্যানটি অচল হয়ে পড়ে। পরে তারা কোন উপায় না পেয়ে ভ্যানটি কৌশলে ঠেলে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অনুমান ৩ কিলোমিটার দূরে দুপচাঁচিয়া সদর ইউনিয়নের ভাটাহার মাঠের পুকুর  এলাকায় একটি বাগারের মধ্যে ভ্যানটি রেখে ভ্যানের ৪টি ব্যাটারী খুলে নিয়ে যায়।  
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) আব্দুর রশিদ সরকার জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে আসামী শাকিলের ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রার্থনা করা হবে। ঘটনাস্থলে পাওয়া স্যান্ডেল অভিযুক্তদের বলে সনাক্ত হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপক চেষ্টা চলছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার, বগুড়া মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে ও সার্বিক দিক নির্দেশনায় থানার একটি চৌকস তদন্ত টিমের নিরলস প্রচেষ্টা এবং ব্যাপক পরিশ্রমের ফলে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে নৃশংস এই হত্যা কান্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে