প্রকাশিত : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:১৪

ক্ষেতলালের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প হারাতে বসেছে

বাজারে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায়
গোলাম মোস্তফা, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, জয়পুরহাট:
ক্ষেতলালের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প হারাতে বসেছে

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এক সময় রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নসহ প্রায় কাজেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্র। দামে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর বলে সব পরিবারেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরী পাত্র। উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর গ্রামে মৃৎশিল্প পেশায় ৬০টি পরিবার জড়িত আছে। খড়, কাঠি ও মাটির সাথে যুদ্ধ করে কুমাররা পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে ঝড়, বৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা উপেক্ষা করে এই পেশাকে ধরে রেখেছে আজও। শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহে মাটির হাড়ি, বাহারি চিতল, পুলি ও ভাপা পিঠাসহ হরেক জাতের পিঠা তৈরীতে খোলা, দধির পাতিল, টালি, ঘট, মুটকি, থালাবাসন ও মাটির লাম্পসহ বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করতো গ্রাম বাংলার মাটির নিপুন কারিগর কুমাররা। ওইসব তৈরি জিনিসপত্র কেউ ভ্যানে এবং কেউ মাথায় নিয়ে বিক্রি করতো। বিক্রি করে উপার্জিত অর্থেই চলতো তাদের পরিবার।  প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও সিলভারের তৈরিকৃত সামগ্রীর  ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে ওই সব মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্র। তাই কুমাররা পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দিতে জাতিগত পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় যখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি তখন ভরসা ছিল কেবলই মাটির তৈরি বাতি। তাতে কেরাসিন তেল দিয়ে চলতো রাতের সকল কাজ। সেই হাজার বছরের ঐতিহ্য ও  গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

সরেজমিনে উপজেলার বড়াইল ইউপির দক্ষিণ হাটশহর গ্রামের পাল পাড়ায় গেলে রাধেশ্বর চন্দ্র পাল (৬৫) বলেন, আমার কোন সম্পদ নেই। এক ছেলে, ৩ মেয়ে। এদের মধ্যে এক মেয়ের মৃগী রোগ থাকায় স্বামীর সংসার হয়নি। বর্তমানে আমার বাড়ীতেই আছে। গরীব মানুষ বলে চিকিৎসা করতে পারিনা। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। অর্ধহারে ও অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। আবার পুজি না থাকায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়া সম্ভব হয়না।
একই গ্রামের মিলনা রানী (৩৬) ও মনোরঞ্জন পাল (৭০) এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, এক সময় বিনামূল্যে মাটি পাওয়া যেত। এখন তা পাওয়া যায়না। গত দু’বছর পূর্বেও প্রতি গাড়ি মাটির দাম যেখানে ছিল মাত্র ৪০০ টাকা। এখন ওই মাটিই ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও শুধু বাড়েনি মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম । ৬০ বছর বয়সী বিধবা কানন রানী বলেন, ১২ বছর বয়স হতে এ পেশায় জড়িত আছি। একদিনে কোন কিছুই তৈরি করা যায়না, সময় নিয়ে বানাতে হয় এবং সেগুলি শুকিয়ে পোড়ানো হয়। এখন আর মাটির জিনিসের তেমন চাহিদাও নেই । সরকারি সহযোগিতা ও বাজারে মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদা থাকলে হাজার বছরের ঐতিহ্য হিসেবে পেশাটি টিকে থাকতে পারবে। নতুবা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে ওইসব সৌখিন ও স্বাস্থ্যকর মৃত শিল্প।

বিসিকের জেলা উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত কেউ প্রশিক্ষণ ও কারো কোন আর্থিক সহযোগিতা লাগলে বিসিক এর পক্ষ হতে সাহায্য করা হবে। তিনি বলেন প্রতিযোগিতামুলক বাজারে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে মাটির তৈরি ওই সব জিনিস পত্রের নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। তাহলে অন্যসব শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাজারে টিকে থাকতে পারবে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে