প্রকাশিত : ৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:৩২

শেরপুরে কোচিং বাণিজ্যে হিংস্রতা!

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মারামারি, পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ
শুভ কুন্ডু, শেরপুর-বগুড়াঃ
শেরপুরে কোচিং বাণিজ্যে হিংস্রতা!

বাধ্যতামূলক কোচিং বন্ধের দাবিতে স্কুল প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করেছে শতাধিক শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের দুই অংশের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। রবিবার (৬নভেম্বর) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খানপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ ৫৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী খানপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমান ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এবং ১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে।
জানা গেছে, আর ওই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মো: লিটন শেখ এর বিরুদ্ধে কোচিং বানিজ্য নিয়ে দীর্ঘদিনের মৌখিক অভিযোগ ছিলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। কিন্তু অভিযোগে কোনো কাজ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (৩নভেম্বর) প্রায় ৪০/৫০ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বরাবর একত্রে আবারো লিখিত অভিযোগ করে এবং রবিবার স্কুলের শুরুতেই টিসি চেয়ে স্কুল প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শিক্ষক লিটন শেখের পক্ষে ও বিপক্ষের শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণীকক্ষে কোচিং না করা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও হেয়প্রতিপন্ন করেন শিক্ষক মো: লিটন শেখ। মো: রাব্বি সরকার, মোছা: সুমি খাতুন সহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রী জানায়, সঠিকভাবে না বুঝিয়ে যেকোনো ভাবে ভুল ধরে শ্রেণীকক্ষে মারধর করেন তিনি। পরিক্ষার প্রশ্নপত্র কিন্তু আমরাই করব এবং প্রাকটিক্যাল পরিক্ষার নম্বর পাবেনা বলেও ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ পাওয়া যায় লিটন শেখ এর বিরুদ্ধে।
তবে লিটন শেখ এর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যে বলে ওই স্কুলের সাবেক কিছু শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছে। সাবেক ছাত্র মো: রাতুল আহম্মেদ সহ অন্যান্যরা বলছে লিটন স্যারের বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
অভিভাবক মো: হোসেন আলী শেখ জানান, আমার মেয়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে এই এলাকার শাকিলের কাছে দুইবেলা সব বিষয় পড়তে পারে, আর লিটন শেখ একবেলা দুই বিষয় পড়িয়ে নেয় ৫০০ টাকা। আমি গরিব মানুষ যেখানে দুইটাকা কম লাগে সেখানেই পড়াই। কিন্তু মেয়ে বেশ কিছুদিন হলো বাড়িতে বলে যে লিটন স্যার নাকি খারাপ ব্যবহার করে। কোচিং নিয়ে এমন দলাদলি এবং হিংস্রতা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবক মহল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিটন শেখ বলছেন, আমি ৩টি ব্যাচে দুই বিষয়ে কোচিং করাই, বেতন নেই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আগে স্কুলে করাতাম এখন বাহিরে করাই। তবে আমার বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে এসব চক্রান্ত করাচ্ছে কোচিং শিক্ষক হেলাল। তিনি আরো বলেন, কোনো স্কুলেই কোচিং বন্ধ নেই আর আমাকে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে খানপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: সজল শেখ জানান, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ আমরা ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম, এমন সময় এই বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।
খানপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইসমাইল হোসেন জানান, প্রায় ৩৫/৪০ জনের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমরা আলোচনা করে অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন শেখ এর কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে নোটিশের উত্তর পেলে পরবর্তীতে স্বীদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ নজমুল ইসলাম জানান, খানপুর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জেনেছি। নীতিমালা অনুযায়ী এভাবে কোচিং করানো নিষেধ। তবে এ বিষয়ে স্কুল কতৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শনোর চিঠি দিয়েছে পাশাপাশি আমিও তার বক্তব্য জানতে চাইব। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগে সে দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে