প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ২১:২২

আজ সনাতন ধর্মালম্বীদের নবান্ন উৎসব

দুপচাঁচিয়া(বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
আজ সনাতন ধর্মালম্বীদের নবান্ন উৎসব

কার্তিকের শুরু থেকে ধান পাকতে শুরু করে। হলুদ রঙ্গা এ পাকা ধান দেখে খুশি হন কৃষক। এরপর কৃষক সে ধান কেটে গোলায় তোলেন। রেখে দেন বার মাস খাওয়ার জন্য। নতুন এ ধান গোলায় তোলার পর কৃষকের পরিবারে উৎসবের সৃষ্টি হয়। খাওয়া হয় নতুন ধানের ভাত। তৈরি করা হয় পিঠা-পায়েশ। খাওয়ার পাশাপাশি সবাই মিলে আনন্দ করেন। নতুন ধান ঘরে তোলার এ আনন্দের নামই নবান্ন উৎসব। অগ্রাহায়ণ মাসে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে এ উৎসব হয়ে থাকে প্রাচীনকাল থেকেই। 
‘নতুন ধান্যে হবে নবান্ন’- কবির এ অকাট্য বাক্যের ধারাবাহিকতায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী পঞ্জিকা মতে আজ শুক্রবার(অগ্রহায়ণের প্রথমদিন) সনাতন ধর্মালম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করবেন। উপজেলার গয়াবান্ধা সরকারপাড়া, সাবলা হিন্দুপাড়া, ফেঁপিড়া, সরঞ্জাবাড়ী হিন্দুপাড়া, কইল, খানপুর ও উপজেলা সদর সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালনে নানা আয়োজন করে থাকেন। এদিন প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় আতপ চালের গুড়া গুলিয়ে আল্পনা আঁকা হয়, উঠান ও ধানের গোলায় গোবর গুলিয়ে লেপ দেয়া হয়। সকালে ছোট্ট ছেলেদের স্নান করিয়ে নতুন ধুতি পড়িয়ে বয়স্ক লোকেরা তাদের সঙ্গে নিয়ে আবাদী জমিতে যায়। জমি থেকে তিন গোছা ধান কেটে তাতে সিঁদুর, কাজলের ফোঁটা, কলাপাতা দিয়ে ঢেকে মাথাই করে বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে আসে শিশুরা। এসময় গৃহবধূরা শঙ্খ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে ধানগুচ্ছ সহ শিশুটিকে বরণ করে নেয়। এধরণের অনুষ্ঠানকে এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মালম্বীর লোকজন আগকাটা(প্রথম ধান কাটা) বলে থাকেন। তারপর কাটা ধানগুচ্ছ ঘরের ছাদের তীরে আটকিয়ে রাখা হয়। এটি সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি ঐতিহ্য।  
উপজেলার কইল গ্রামের বাসিন্দা ও আলতাফনগর ইবনে সৈয়দ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার প্রামানিক জানান, আবহমান কাল থেকেই সনাতন ধর্মালম্বীরা এ নবান্ন উৎসব ধুমধামের সাথে পালন করে আসছেন। এতে করে সমাজে একে অপরের প্রতি ভাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। 
এদিকে এ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আজ দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের মাছ বাজারে বড় বড় মাছের মেলা বসবে। লোকজন সাধ্যমত রকমারী সবজি সহ বড় বড় মাছ কিনে হরেক রকম সুস্বাদু রান্না, নতুন চালের পায়েশ, পিঠা-পুলি তৈরি করে মেয়ে-জামাই সহ আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করে থাকেন।
দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দীক আলম জানান, প্রতিবছর নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সিও অফিস বাসস্ট্যান্ডে বড় বড় মাছের মেলা বসে। মাছের ক্রেতা ও বিক্রেতা বেশি হওয়ায় গত বছর থেকে নবান্নের আগেরদিন রাত ৯টা থেকেই দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা ভীড় জমায়। বেশির ভাগ ক্রেতা রাতেই মাছ কিনে থাকেন।  

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে