প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ২২:১৮

ধুনটে মামলাবাজ মনেজার মাকে খুঁজে পেতে পুলিশের পুরস্কার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধুনটে মামলাবাজ মনেজার মাকে খুঁজে 
পেতে পুলিশের পুরস্কার ঘোষণা

বগুড়ার ধুনটে মামলাবাজ মনেজার বৃদ্ধ মা ঘূর্ণি বেগমকে খুঁজে পেতে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ধুনট থানার এএসআই আবু তাহের তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এই পুরস্কারের ঘোষণা দেন।

এদিকে মামলাবাজ মনেজার মামলা থেকে রেহাই পায়নি তার স্বামী ও প্রতিবেশিও। তার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় প্রতিবেশি এক ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ২২ বছর কারাভোগ করেছেন এবং তার স্বামী এসিড নিক্ষেপের মামলায় ৪ মাস ধরে যাবজ্জীবন কারাভোগ করছেন।  

থানা পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, ১৯৯৭ সালে আনারপুর দহপাড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্ত মনেজা খাতুন তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বাসবাস শুরু করে। সেই বছরেই মনেজা খাতুনের একটি গরু প্রতিবেশি বেল্লাল ও বাদশা মিয়ার জমির পাট ক্ষেত নষ্ট করে।

একারনে বাদশার মা বিষয়টি মনেজা খাতুনকে জানালে এবং গালাগালি করলে মনেজা তাকে মারধর করে। এতে বাদশা মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাড়িতে মনেজার গরুটি বেধে রাখে। একারনে মনেজা বেগম বাদী হয়ে বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা দায়ের করেন। 

এর কয়েক দিন পরই মনেজা খাতুনকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ এনে তার মা ঘূর্ণি বেগম বাদী হয়ে আনারপুর দহপাড়া এলাকার দিলবর হোসেনের ছেলে বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত বাদশা মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। দীর্ঘ ২২ বছর কারাভোগের পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পায় বাদশা মিয়া।

এদিকে শুধু বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধেই ধর্ষণ মামলা দিয়ে ক্ষ্যন্ত হননি মনেজা, একইভাবে প্রতিবেশি দুলু মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন মনেজা। এরপর দুুলু মিয়াকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু দুলু মিয়া তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে মনেজা খাতুন বাদী হয়ে প্রতিবেশি আব্দুল বারি, দুলু, খলিল ও সোবাহান সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এসিড নিক্ষেপের একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ওই মামলা থেকে বাঁচতে দুলু মিয়া বাধ্য হয়ে মনেজা বেগমকে বিয়ে করেন। তারা পরবর্তীতে একসঙ্গে দীর্ঘ বছর ঘর-সংসার করলেও মামলা প্রত্যহার করেননি মনেজা। একারনে ওই এডিস নিক্ষেপের মামলায় স্বামী দুলুু মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। গত ৪ মাস আগে আদালতের নির্দেশে ধুনট থানা পুলিশ দুলু মিয়াকে কারাগারে প্রেরন করেন।

এদিকে দীর্ঘ ২২ বছর কারাভোগের পর প্রতিবেশি বাদশা মিয়া বাড়িতে ফিরে আসলে মনেজা একের পর এক মামলা করতে থাকেন তার বিরুদ্ধে। মনেজার এসব নাটনীয় মামলার নেপথ্যে রয়েছেন তার প্রথম স্বামীর সন্তান আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ের নায়েক মোস্তফা কামাল। 

সর্বশেষ ২০২২ সালের ০৬ জুন মোস্তফা কামালের স্ত্রী উম্মে হাবিবা মলি বাদী হয়ে তার শ্বাশুড়ি মনেজা খাতুনকে ছুরিকাঘাত ও নানী শ্বাশুড়ি ঘূর্ণি বেগমকে অপহরনের অভিযোগ এনে বাদশা মিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের দায়ের করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন সব তথ্যের সন্ধান পায় ধুনট থানা পুলিশ। মনেজা ও তার ছেলে পুলিশ সদস্য ঘূর্ণি বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছেন বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

একারনে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ওই মামলাবাজ মনেজার পুলিশ ছেলে বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ের নায়েক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর একটি প্রতিবেদক দাখিল করেন। একারনে পরবর্তীতে গোলাম মোস্তফাকে বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন থেকে কক্সবাজার রোহিংঙ্গা ক্যাম্পে বদলী করা হয়।

এবিষয়ে ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পুলিশি তদন্তে মনেজার বিরুদ্ধে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার ছেলে গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধেও একাধিক অনৈতিক অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে ধুনট থানার এএসআই আবু তাহের জানান, মামলাবাজ মনেজা বেগম তার বৃদ্ধ মা ঘূর্ণি বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাই ঘূর্ণি বেগমকে খুঁজে পেতে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। 

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে