প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৬:২৩

ঝুঁকিপূণ ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন!

শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি -
ঝুঁকিপূণ ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশন!

বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর বাজারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেছে অবৈধ ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশন। স্টেশনের পেছনেই আড়ালে রাখা হয়েছে গ্যাস ভর্তি ট্রাক। আর ট্রাকের ভেতরে ও মাটিতে সেট করে রাখা আছে প্রায় শতাধিক বড় বড় গ্যাসের সিলিন্ডার। সেখান থেকেই পাইপের মাধ্যমে পাম্প মেশিনে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছে। আর এই গ্যাস আনা হচ্ছে ঢাকা মিরপুর ও গাজিপুরের কিছু পাম্প থেকে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভ্রাম্যমাণ এই সিএনজি স্টেশন থেকে অতিরিক্ত দামে কার, মাইক্রো ও অটোতে নিয়মিত সিএনজি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় চালকদের কিছুটা সুবিধা হলেও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় যেকোনো সময় অতিরিক্ত তাপে অথবা চাপে ট্রাকে ও মাটিতে থাকা সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি জায়গায় এই ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশন সচল রয়েছে। এর আগে এই সিএনজি স্টেশনে আগুন লেগে ঝলসে যায় ওই সিএনজি স্টেশনেই কর্মরত রকির বাবা রতন কর্মকার, রিফাত, রাশেদ ও যাত্রী সহ মোট ৫ জন। পরে দমকল বাহিনী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। পরবর্তীতে তাদের চিকিৎসা করিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
স্থানীয় চালকরা বলছেন, এখান থেকে সিএনজি পাওয়ায় আমাদের সুবিধা হয়েছে, এখন আর গ্যাসের জন্য মহাসড়ক দিয়ে বগুড়ায় যেতে হয় না। ভবানীপুর থেকে ৫৩ থেকে ৬০ টাকায় প্রতি সিএফটি সিএনজি কিনছেন বলে জানান তারা। সিএনজি অটো চালক মো: রিন্টু, সুকুমার, মো: আতাউর রহমানরা বলেন, আটটার পরে বগুড়ায় গ্যাস আনতে গেলে পুলিশ ধরে ২৬শো টাকার কেস দেয়, তাই আমরা ১২ টাকা বেশি দিয়ে ভবানিপুর থেকেই গ্যাস তুলি। ভবানীপুর থেকে গ্যাস তুলে দামও বেশি দিতে হয় আবার মাপেও কম পাই। মাঝিরা থেকে ৩৫০ টাকার গ্যাস নিয়ে চলি ১২০ কিলোমিটার আর ভবানীপুরের ৪৭০ টাকার গ্যাসে চলে ৭৫ কিলোমিটার। ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ৫২ টাকা সিএফটি সিএনজি বিক্রি করি আর পাম্প বিক্রি করে ৪৩ টাকায়।
সিএনজি স্টেশনের স্বত্তাধিকারী ও ভবানিপুর উইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের ডিসির নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) আছে এবং ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনও আছে। তবে বিষ্ফোরক পদিপ্তরের লাইসেন্স এখনো হয়নি।
এ বিষয়ে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইন্সপেক্টর মো: নাদির হোসেন বলেন, ভবানীপুরের ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশটি দেখেছি, তাদের অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র আছে কি না সে বিষয়ে উর্ধোতন কর্তীপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা চাঁদনী বাজারকে বলেন, ভবানীপুর ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশনটি আইনানুগভাবে যথাযথ আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
উল্লেখ্য, তিন বছর আগে এই ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশনটিই শেরপুরের রনবীরবালা এলাকায় স্থাপন করা হয় এবং সেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: লিয়াকত আলী শেখ সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় স্টেশনটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এর পর শহর থেকে সড়িয়ে ভবানীপুর গ্রামে স্টেশনটি চালু করা হয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে