প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩ ২২:৩৬

বই সংকটের মাঝেও গোবিন্দগঞ্জে ডজন খানেক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ! শিক্ষা কর্মকর্তাদের বই বিলাস

শ্যামল রায়, স্টাফ রিপোর্টার :
বই সংকটের মাঝেও গোবিন্দগঞ্জে ডজন খানেক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ!
শিক্ষা কর্মকর্তাদের বই বিলাস

সারা দেশে একযোগে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড, কমিউনিটি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে ২০১৩ সালে ১ জানুয়ারি। বর্তমানে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৪ ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ২২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৭২টি। বর্তমান সরকার টানা ১১ বছর দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে। 

তবে উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও ২০২৩ সালের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। নানা জটিলতায় বেশকিছু উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী এখনও বই পায়নি। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি এ মাসেই প্রাথমিকের লক্ষ্যমাত্রার ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি বই ছাপা সম্পন্ন হয়ে উপজেলাগুলোতে পৌঁছাবে। সেদিক বিবেচনায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা করেছেন বই বিলাস।
৪৬০ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তন এবং প্রায় ৬লাখ জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ শিক্ষা হারের বিপরীতে পূর্বের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৩ এর সাথে ২০১৩ সালে সরকারি করা রেজিস্ট্রার ৯৪ ও কমিউনিটি ৬টি সহ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ২৫৩টি। রয়েছে শতাধিক কিন্ডার গার্ডেন ও কেজি স্কুল এবং মামলাজনিত কারণে এখনও সরকারিকরণে ঝুলে থাকা কয়েকটি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এদের সাথে চলতি বছর যোগ হয়েছে প্রায় ২০ এর অধিক অস্তিত্বহীন নাম সর্বস্ব বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবারও সরকার দেশের সব বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করতে পারে; এমন আশায় এসব প্রতিষ্ঠান রাতারাতি গড়ে উঠেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা অদৃশ্য উৎকোচে কাগজে-কলমে স্কুল সৃষ্টি করার মূল উৎসাহদাতা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শুধু তাই নয় চলতি বছরে এমন ডজন খানেক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে বই সংকটের মধ্যেও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বিপুল পরিমাণে সরকারি বই বিতরণের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ওই সব প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নিতে গেলে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তবে স্থানীয় কিছু অভিভাবক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘর-দরজার কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে প্রতিটি ক্লাশে একাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে উত্তোলিত বইগুলোর কী হবে?
উপজেলাজুড়ে এমন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আসকুর আদর্শ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভায়রোপাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগুনবাড়ি আব্দুর রশিদ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওয়নালা বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাজপুর বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চামড়গাছা বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাখালবুরুজ কামার পাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাখালবুরুজ দক্ষিণ পাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পার সোনাইডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর সাবগাছি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা সাখইল বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামপুরা বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সাইনবোর্ড, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীহীন অধিকাংশ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের যোগসাজশে অদৃশ্য উৎকোচের বিনিময়ে বই উত্তোলন ও স্কুল কোড খোলা হয়েছে বলে অভিযোগ বিদ্যমান। 
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
উপজেলাজুড়ে এমন অবকাঠামোহীন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শন না করলেও বিদ্যালয় কোড ও ই.এস.আই নম্বর ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ বই ভাংরির দোকানিদের হাতে চলে যাবে। যা সরেজিমেন তদন্ত সাপেক্ষে  অবকাঠামো বা অস্তিত্বহীন অবৈধ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোড বাতিল করে উত্তোলন করা বই জব্দ করা প্রয়োজন। সেই সাথে এসবের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি সচেতন মহলের।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে