প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ২২:২৯

জয়পুরহাটে আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন, দামও বেশী

কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক
আসাদুজ্জামান নয়ন, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটে আগাম জাতের আলুর 
বাম্পার ফলন, দামও বেশী

আলু আর ধান কালাইয়ের প্রাণ, আলু চাষি কৃষকরা এবার সত্যিই প্রাণ ফিরে পেয়েছে কালাই উপজেলার কৃষকরা। আগাম চাষের আলু তোলায় ব্যস্ত এখন কৃষক কৃষাণীরা। অনুকূল আবওহায়া আর সময়মত সার ও বীজ পাওয়ার কারনে এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। বাজারে আলুর দামও বেশী। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ও দাম বেশী পাওয়ায় কৃষকের চখে-মূখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করা গেছে।   

আলুচাষিরা জানান, এখন যারা আলু তুলছেন তা বিক্রি করে লাভের মুখই দেখছেন। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ভালই লাভ টিকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১শ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বৃদ্ধি পেলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তারা ফলনের সাথে মোটা অংকের লাভের মুখও দেখবেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার হিচমি, ভাদসা, ক্ষেতলাল উপজেলার মুন্দাইল, পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর, কালাই উপজেলার হাজিপাড়া মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষীরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মাঠে মিউজিকা, গ্যানোলা, ক্যারেজ, রোমানা, পাকরি ও স্ট্রিক জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন।
 
সোমবার সকালে কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাটে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, বাজারে প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর লাল স্ট্রিক আলু ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। আলুর দাম দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা খুশি। এভাবে চলতে থাকলে চাষিরা এবার লাভের মুখ দেখবেন। 

৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু চাষ করেছেন কালাই উপজেলার বালাইট গ্রামের আলুচাষি আবুল কাশেম। তিনি বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে ফলন হয়েছে ৯০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। ৭২০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৬৫ হাজার টাকায়। তাতে লাভ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। দশ-পনের দিন পরে সেগুলোও তুলতে হবে। এবার আলুর দাম যদি এ রকম থাকে তাহলে মোটামুটি লাভের মূখ দেখা যাবে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরের লোকশান কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠবে।    

সদর উপজেলার হিচমি গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো, বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমিসহ পরিবারের লোকজন। বাহিরের শ্রমিককে নিতে হয়নি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। দুই বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ১৩০ মণ। ৬৬০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে প্রায় ২১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আলু বিক্রি করে এবার ভালই লাগছে। 

মোলামগাড়ীহাটের পাইকার সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড়বড় শহরের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানীর উপর দাম ওঠা-নামার বিষয় নির্ভর করবে। তবে গত সপ্তাহ থেকে মোকাগুলোতে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রতি মণে এক থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার হেক্টর, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার হেক্টর এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সাড়ে তিনশ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেশী হয়েছে।  
 
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল করিম বলেন, বাজারে রোমানা পাকরি ও দেশী পাকরি (লাল) আলু ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই আলু এক সপ্তাহ পূর্বে ১০৫০ থেকে ১০৮০ টাকা মণ ছিল। আর মিউজিকা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা মণ। এই আলু গত সপ্তাহে ছিল ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার চাষিরা লাভের মূখ দেখছেন। এবার আলুর দাম কমার কম হওয়ায় কোনো সম্ভাবনা নেই। কারন বাহিরের অনেক দেশই বাংলাদেশের আলু নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। সবকিছু মিলে দেশে-বিদেশে এবার আলুর চাহিদা রয়েছে।    

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন                 

উপরে