প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ২২:৪৩

গাবতলীতে থামছে না ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ম!

সাব্বির হাসান, গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ
গাবতলীতে থামছে না ভূমি
 দস্যুদের দৌরাত্ম!

আইন শুধু যেন কাগজের পাতায় সীমাবন্ধ। ভূমি আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই কোথাও। দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেন দায়বদ্ধতা থেকে কিছুই করছে না। প্রশাসন নীরব থাকায় বগুড়ার গাবতলীতে কোন কিছুতেই যেন থামছে না ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ম। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রাতের আধারে চলছে ভূমি দস্যুদের তান্ডব। উপজেলার মহিষাবান, সোনারায়, রামেশ্বরপুর, দূর্গাহাটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিকস্থানে কৃষি জমিতে এক্সভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে চলছে পুকুর খনন ও টপসয়েল বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি বিক্রির কাজ। উপজেলার সোনারায় আগের পাড়া, উজগ্রাম, খুপি, জামিরবাড়ীয়া, রামেশ্বরপুরের তেজোপাড়া, দূর্গাহাটার হন্ন্যির বিল, মহিষাবান ইউনিয়নের ছয়মাইল, মহিষাবান ইউপির পশ্চিমপার্শ্বে পেরী সড়কে মোল্লা ইটভাটার সামনে ও পূর্বপাশে, ধোড়া গ্রামে কৃষি জমিতে এক্সভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে চলছে পুকুর খননের কাজ। এরপরে ঢাকনাবিহীন ট্রলি ও ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে সেই মাটি। ভূমি আইন না মেনে পুকুর খনন ও মাটি বহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার স্থায়িত্ব। এছাড়া খোলা যানবাহনে মাটি বহনের কারণে রাস্তার ওপর পড়ে জমছে মাটির আস্তরণ। ফলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সেইসাথে ধুলা উড়ে পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকসহ যাত্রীরা প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন। 
একাধিকসূত্র জানান, বিভিন্ন এলাকার ভূমি দস্যুরা হলেন, মহিষাবান ইউনিয়নের রানীর পাড়া গ্রামের আবদুস সামাদ, আক্কাস, গোলাবাড়ীর সুজন, ছয়মাইল এলাকার হাম্বি, লক্ষিকোলা গ্রামের কালে মাসুদ, বাবু, দাঁড়াইলের রবিউল ইসলাম রনি, মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান আলী ও আব্দুল রাজ্জাক ওরফে চিকে রাজ্জাক। এদের মধ্যে মাসুদ ও ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী অনেকটাই দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে এই কাজ। ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী আ’লীগ করেন এবং মাসুদ ভিন্নদলের হলেও তাদেরকে বাধা দেওয়ার সাধ্য কারো নেই। এদের কাছে পাশের জমির মালিকরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে। এরআগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ইউপি সদস্য শাহজাহান আলীর ভেকু মেশিন জব্দ করে মামলাও দিয়েছিলেন। তারপর থামছে না তার এই কর্মকান্ড।  
সোনারায় ইউনিয়নের মান্নান, লিটন, সহিদুল ইসলাম মুলো, পিন্টু ও আঃ রাজ্জাক ও রামেশ্বপুর তেজোপাড়ার শাহিন। এই মাটি দস্যুরা শীত মৌসুম এলেই ফসলি জমির মাটিকে প্রধান টার্গেট করে চলে তাদের মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। উৎপাদন কমে যাচ্ছে ফসলের। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে অভিযান পরিচালনা করেও কিছুতেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভূমি দস্যুরা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজের নামে নির্বিচারে ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন ও কৃষি জমির টপসয়েল বিক্রি করে চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের জমির একাধিক কৃষক বলেন, পুকুর খনন ও জমির টপসয়েল বিক্রির ফলে তাদের ফসলসহ জমিও নষ্ট হচ্ছে। পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি হবে। জমি ভেঙ্গে পুকুরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। বাধা দিলে বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি যাতে করে আমরা কৃষকেরা বাঁচতে পারি। 
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান আল-ইমরান জানান, সরকারি সম্পদ বা জনগনের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে সরেজমিনে গিয়ে ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এই সব ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীরদের নিয়মিত মামলা দায়ের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।  

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন                 

 

উপরে