গাবতলীতে সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ বিএডিসি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে

বগুড়ার গাবতলীতে সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রদানে অর্থের বিনিময়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে গাবতলী উপজেলা বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সেচ কমিটির সদস্য সচিব এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা আসমাউল বিন হোসেন’র বিরুদ্ধে। এতে করে ফুঁসে উঠেছেন উপজেলার শত শত আবেদনকারী সেচ পাম্পের লাইসেন্স গ্রাহকরা।
জানা গেছে, চলতি বছরসহ গত এক বছরে সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য উপজেলার শত শত গ্রাহক উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেছেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় ও সরকারী নিয়মনীতি অনুযায়ী উপজেলা বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী, কৃষি দপ্তরের একজন প্রতিনিধি এবং পল্লী বিদ্যুৎ এর একজন প্রতিনিধিকে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিএডিসির উপ-সহকারী কর্মকর্তা তিনি একাই পল্লী বিদ্যুৎ এর কিছু ইলেকটিশিয়ান (দালাল)দের নিয়ে অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয় এমন আবেদনকারীদের নামেমাত্র তদন্ত করে লাইসেন্স প্রদানের জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করছেন। এতে করে সামাজিকভাবে একে অপরের মধ্যে দুরত্ত্ব যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে সংঘাতের আশংকা। কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৯অনুযায়ী একটি বৈধ সেচ পাম্প থেকে অপরটির দূরত্ত হতে হবে সর্বনিম্ন ২’শ ৫০মিটার অর্থাৎ ৮’শ ২০ফুট এবং সেচ পাম্পের আওতায় জমি থাকতে হবে কমপক্ষে ১২বিঘা। সরকারী বিধিনিষেধ না মেনে শুধুমাত্র একক ক্ষমতা বলে অর্থের বিনিময়ে অনিয়মকেই নিয়ম বানিয়ে সুপারিশ করছেন অযোগ্যদের সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রদানে। ভুক্তভোগী উপজেলার কাগইল বুজরুক গ্রামের রেজাউল করিম টুকু বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গাবতলী জোনাল অফিসের আওতাধীন একজন সেচ গ্রাহক। তিনি দীর্ঘদিন থেকে সেচ মেশিন পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু তার সেচ মেশিনের নিকটস্থ একই গ্রামের প্রতিপক্ষ শফিকুল ইসলাম নামের একব্যক্তি তাদের নামীয় সেচ মেশিন স্থাপনের পায়তারা করছেন। এমতবস্থায় রেজাউল করিম টুকু বাদী হয়ে গত বছরের ১লা ডিসেম্বর/২২ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১০ডিসেম্বর/২২ ২২ইং তারিখে ইউএনও আফতাবুজ্জামান আল-ইমরান বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ওই বিএডিসি অফিসারকেই। অভিযোগের ৪মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করে ভূক্তভোগী রেজাউল করিম টুকু। উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে আজাদুলের বিদ্যুৎ এর সেচ পাম্পের ৪’শ ফুট দূরত্বে রনজুকে সেচ মেশিনের লাইসেন্স প্রদানের জন্য তদন্ত করেছেন কিন্তু টাকা না পেয়ে ৬’শ ৩০ফুট দূরত্বে থাকা আবেদনকারী শেফালীর তদন্ত করছেন না। এছাড়াও দূর্গাহাটা ইউনিয়নের দরগাতলী গ্রামের আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী বিদ্যুৎ এর সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত তিনি তদন্ত করেনি। একই অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার চকবোচাই গ্রামের হাফিজার রহমান। তিনি বলেন, গত এক বছর আগে সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত তদন্ত করা হয়নি। আবেদনের তদন্ত না করার মতো শত শত অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়া গত বছরের ৩রা আগষ্ট উপজেলা সেচ কমিটির সভায় উপজেলার পশ্চিম মহিষাবান গ্রামে সোলার ও বিদ্যুৎ চালিত মটর রয়েছে তারপরও মাত্র ১’শ ৫০ফুট দূরত্বে ওই গ্রামের শাজাহান সরকারের ছেলে মোস্তফা সরকারকে সেচ পাম্পের লাইসেন্স দিয়েছেন। উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী মৌজায় কোলারবাড়ী গ্রামের ফয়জালের ছেলে মানিক মিয়া এবং নশিপুর গ্রাম ও মৌজার মুনছুর রহমান প্রাং এর ছেলে আব্দুর রশিদকে ৩’শ ফুট দূরত্বে সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রদান করেছেন। দূর্গাহাটা গ্রামের দূর্গাহাটা মৌজার গোতা ফকিরের ছেলে ইন্তেজার ফকিরকে ৬’শ ফুট দূরত্ত্বে লালখাঁপাড়া মৌজায় লাইসেন্স প্রদান করেছেন এবং একই ইউনিয়নের সোলারতাইর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে সানাউল সোলারতাইর মৌজার ১১৫৭/১০৬৭ নং দাগে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে তিনি অন্য ৮’১১ দাগে বোরিং করেছেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধরনা দিলে কোন কাজ হয় না বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা। এদিকে উপজেলা বিএডিসি উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) আসমাউল বিন হোসেন তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলায় অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে সেখানেও একই ধরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলার নারছি ইউনিয়নের চর গোদাগাড়ী গ্রামের মৃত ফরিদ আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যুৎ এর সেচ মেশিন পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু তার সেচ মেশিনের নিকটস্থ একই গ্রামের প্রতিপক্ষ অকো মুন্সির ছেলে আঃ রশিদ আকন্দকে মাত্র ২’শ ফুট দূরত্বে সেচের লাইসেন্স প্রদান করেছেন। এছাড়াও হাটফুলবাড়ী দহপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ প্রাং এর ছেলে আব্দুল মান্নান লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আগে আবেদন করলেও তার আবেদনের তদন্ত না করে একই গ্রামের জালাল উদ্দিন মন্ডলের ছেলে কেরামত আলীর আবেদনের তদন্ত করে লাইসেন্স প্রদানের পায়তারা করেছেন। আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন যে, যেসব আবেদনকারী সেচ গ্রাহকের নিকট থেকে অর্থ পেয়েছেন শুধুমাত্র সেটাই তদন্ত করছেন। যারা অর্থ দিচ্ছেন না তাদেরটা আর তদন্ত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে গাবতলী উপজেলা বিএডিসি উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) আসমাউল বিন হোসেন বলেন, টাকা নিয়ে তদন্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়। নিয়মনীতি অনুসরণ করেই তদন্ত করা হচ্ছে। কাগইলের বুজরুক গ্রামের টুকুর বিষয়ে তিনি বলেন, রেজাউল করিম টুকুর সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ এর সংযোগ রয়েছে। কিন্তু তার লাইসেন্স নেই। তবে তিনি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আর সারিয়াকান্দির নারছি ইউনিয়নের চর গোদাগাড়ী গ্রামের অকো মুন্সির ছেলে আঃ রশিদ আকন্দকে সেচের লাইসেন্স প্রদানে আমি কোন সুপারিশ করিনি। এ বিষয়ে ইউএনও মোঃ আফতাবুজ্জামান আল-ইমরান বলেন, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যদি কোন সেচ পাম্পের লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সেজন্য অবশ্যই ভূক্তভোগীকে আমার দপ্তরে আসতে হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন