প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ২২:৩৮

শাজাহানপুরে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ৭৭ সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবার

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
শাজাহানপুরে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত ৭৭ সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবার

বগুড়ার শাজাহানপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ৪র্থ ধাপের ঘর ১ মাস আগে হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলেও এখন পর্যন্ত ঘরে ঢোকার ভাগ্য জোটেনি উপজেলার ৭৭টি সুবিধাভোগী গৃহহীন পরিবারের। উদ্বোধনের আগে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বোধনের দিন ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তরের ফটোসেশন করে তা আবার ফেরৎ নিয়ে ঈদের আগে ঘর হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারায় ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সুবিধাভোগীরা। ফলে প্রশাসনের প্রতি গভীর ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

আড়িয়া ইউনিয়নের বারআঞ্জুল গ্রামের সুবিধাভোগী আবুল কালাম বলেন, গত ২২ মার্চ উপজেলায় ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘরের চাবি ও দলিল হাতে দিয়ে ছবি তোলা হয়। তারপর সেগুলো আবার ফেরত নেয়া হয়। আর জানানো হয় ঈদের আগে ঘর হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়নি। ২ কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের একখন্ড জমির উপর খড়কুটার বেড়া দিয়ে কোন রকম মাথা গোঁজার কুড়েঘর তৈরী করে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

আমরুল ইউনিয়নের পরানবাড়িয়া গ্রামের সুবিধাভোগী লুৎফর রহমান জানান, তিনি বেশ কয়েকদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। প্রতিবারেই তিনি বলেছেন ঈদের আগেই ঘর দেয়া হবে। কিন্তু দেয়া হলো না। ঈদের আগে ঘর পেলে পরিবার নিয়ে সুখে আনন্দে ঈদ উদ্যাপন করতে পারতেন।

উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী মোস্তা মিয়া। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনধারন করেন। থাকেন অন্যের বাড়ির উঠানে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন ‘জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার পেয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। শখ ছিল নতুন ঘরে উঠে পরিবারসহ ঈদ করার। কিন্তু তা আর হলো না।

খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের সুবিধাভোগী মাহফিজার রহমান বলেন, এমনিতেই কাজ ঠিক মত হয়নি। মাটি কাটা লাগবে। দুইদিন উপজেলায় গেছেন। সেখানে তারা বলেন যার ঘর তাই মাটি কেটে ঠিক করে নেন। একদিন ঘর পরিস্কার করে রেখেছিলেন। ওইদিন ঘর দেয়ার কথা কিন্তু দেয়নি। ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ নাই, পানির ব্যবস্থা নাই। ঈদের আগে ঘর পেলাম না। ঈদটাই মাটি হয়ে গেল।

খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, বিদ্যুতের খুটি ও তার টানানো হয়েছে। কিন্তু মিটার বসানো হয়নি। একারণেই ঘর হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। তবে ঈদের আগে হস্তান্তর করা হলে ভাল হতো। 

আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিমান জানান, সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণেই এতোদিনেও বিদ্যুৎ সংযোগস্থাপন সম্ভব হয়নি। সুবিধাভোগীরা এসে যখন বলে তখন খারাপই লাগে। ঈদের আগে ঘরগুলো পেলে তারা আনন্দিত হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের কৃতজ্ঞাবোধ জাগ্রত হতো। বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) জানানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ ধাপে শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নে ১৮, আড়িয়া ১৫, খোট্টাপাড়া ১৩, গোহাইল ১২, আশেকপুর ১২, মাদলা ৬ এবং চোপীনগর ইউনিয়নে ১ মোট ৭৭টি গৃহহীন পরিবারের ঘর নির্মাণের জন্য গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতক জমির উপর ২টি শয়ন ঘর, টয়লেট ও রান্নাঘর নির্মাণের অনুকুলে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে ৪র্থ পর্যায়ের ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাহবুবুর রহমান জানান, উদ্বোধনের আগে সমস্ত ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হলেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বিলম্ব করায় ঘর হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই ঘর হস্তান্তর করা হবে।

প্রায় একই কথা বললেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম। তিনি জানালেন, ঈদের আগেই ঘর গুলি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সময় মত সংযোগ দিতে না পারায় ঈদের আগে হস্তান্তর করা সম্ভব হলো না। তবে ঈদ পরবর্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘর গুলি হস্তান্তর করা হবে।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোন দায় নেই। কারণ উদ্বোধনের মাত্র দুই দিন আগে তাদেরকে জানানো হয়েছে। অথচ সরকারী ভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে এই সমস্ত বৈদ্যতিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই মাস লাগে। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে