বগুড়ায় চার মামলায় আসামি বিএনপির ২১১ নেতাকর্মী, অজ্ঞাত অনেকে

বগুড়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ পৃথক চার মামলায় দলটির ২১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২ টার পর বগুড়া সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টার পর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েল।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এজন্য বিশেষ ক্ষমতা ও বিষ্ফোরক আইনসহ অন্যান্য ধারায় চারটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
বগুড়া সদর থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার একদফা দাবিতে বিএনপির পদযাত্রা সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে বনানী থেকে শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে পদযাত্রাটি ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে পৌঁছালে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে ব্যারিকেড দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের জলেশ্বরীতলা কালিমন্দির হয়ে দলীয় কার্যালয় দিকে যেতে বলা হয় । এই সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে সাতমাথা দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এখানে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তরিকুল ইসলামসহ ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় বগুড়া বনানী পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজহর তালুকদার হেনাকে প্রধান আসামি করে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
সদর থানা পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা ও ভাংচুর করেন৷ এ ঘটনাতেও বিএনপি নেতা আলী আজগর তালুকদার হেনাকে প্রধান আসামি করে ২৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এছাড়াও দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে শহরের নবাববাড়ি সড়কে পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগ এনে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল মালেক বাদী হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশাকে প্রধান আসামি করে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের ৪ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচী থেকে ফেরার পথে দূরপাল্লার বাস ভাংচুরের অভিযোগে আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সভাপতি আব্দুল মুহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ভাংচুর হওয়া শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের চালক মো. ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় দুপচাঁচিয়ার সাহারপুকুর বাজার এলাকায় দুপুর পৌনে ৩ টার দিকে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনসহ দুইটি গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই চার মামলাতেই অনেককে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, বিএনপির গ্রেপ্তার দুই নেতাকে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন