প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২১:৪২

শাজাহানপুরে যৌনহয়রানীর অভিযোগে শরিফুল হুজুর সাময়িক বরখাস্ত

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
শাজাহানপুরে যৌনহয়রানীর অভিযোগে শরিফুল হুজুর সাময়িক বরখাস্ত

বগুড়া শাজাহানপুরের বৃ-কুষ্টিয়া দারুল হাদীছ সালাফিয়া তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানার বালিকা শাখার হেফজ শ্রেণীর এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌনহয়রানীর অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি একটি কুচক্রি মহল এই ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি।

জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বালিকা শাখার হেফজ বিভাগের এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌনহয়রানীর অভিযোগ উঠে ম্যানেজিং কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন ওই শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠে। জানতে পেরে জরুরী সভা ডেকে অভিযুক্ত সহ-সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।

মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুল কারীম জানান, এবিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। লিখিত বা মৌখিক ভাবেও তাকে জানানো হয়নি। হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে সাথে সাথে ম্যানেজিং কমিটিকে জানানো হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সাধারন সম্পাদক মোল্লা আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি জানতে পেরে গত ৪ ডিসেম্বর জরুরী সভা আহবান করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে একটি কুচক্রি মহল এই ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা সদস্য আলহাজ্ব রমজান আলী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তার এক ছেলে, এক মেয়ে ও এক ছেলের বউকে শিক্ষক এবং তিন জামাই ও এক ছেলেকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য করে প্রতিষ্ঠানটিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিলেন। ২০২০ সালে কমিটি গঠনের পর থেকে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটে। ২০২১ সালে উপদেষ্টা সদস্য আলহাজ্ব রমজান আলীর শিক্ষক ছেলে নজিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম যৌনহয়রানীর অভিযোগ উঠে। পরপর দুই বার যৌনহয়রানীর অভিযোগ উঠলে তাকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়। তৃতীয়বার যৌনহয়রানীর অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষ্যে ২০২২ সালের ৬ মার্চ শিক্ষক নজিবুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। নজিবুল ইসলামকে বহিষ্কারের পর থেকেই মূলত প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে তারা। একপর্যায়ে শিক্ষক নজিবুল ইসলামকে বহিষ্কার সিদ্ধান্তের রেজুলেশন খাতার ৭ পাতা চুরি হয়ে যায়। পরবর্তিতে চুরি প্রমানিত হওয়ায় এবছরের আগষ্ট মাসের ১৯ তারিখে কমিটির ৩ সদস্য আলহাজ্ব রমজান আলীর ২ জামাই আব্দুস সালাম ও আব্দুল মান্নান এবং ছেলে আব্দুর রহমানকে সদস্য পদ থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়। এছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচারন ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ডের কারণে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং এবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর মাসে বালিকা শাখার ২ শিক্ষিকা আলহাজ্ব রমজান আলীর মেয়ে মাহমুদা আকতার ও ছেলের বউ ফাতেমা খাতুনকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়। মৌখিক সতর্কের পরও সংশোধন না হয়ে পুনরায় অসদাচারন করায় এবছরের ২৩ নভেম্বর বালিকা শাখার ৪জন শিক্ষিকা তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর শিক্ষিকা পদ থেকে মাহমুদা আকতার ও ফাতেমা খাতুনকে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়। এসমস্ত কারণে প্রতিষ্ঠান ধ্বংশের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন উপদেষ্টা সদস্য আলহাজ্ব রমজান আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ম্যানেজিং কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব দিলবর রহমান ফকির জানান, ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। অভিযোগ প্রমানিত হলে অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তেই প্রতিষ্ঠান চলবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ধ্বংশের যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। তাই প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে কারো কথায় কর্ণপাত না করে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষ্যে প্রকৃত সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ জানান তিনি।

উপদেষ্টা সদস্য আলহাজ্ব রমজান আলী জানান, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। বিভ্রান্তমূলক অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান ধ্বংশের জন্য অর্থ শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। গায়ের জোরে কমিটি গঠন করে তারাই প্রতিহিংসাবশত অন্যায় ভাবে তার সন্তান ও জামাইদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে